ঢাকা বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ক্ষমতা বাড়াতে আসছে জাপানি প্রযুক্তি
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ও যাত্রীদের লাগেজ পরিচালনার সক্ষমতা বাড়াতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
জাপানের এ প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বে থাকা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স অতিরিক্ত ২০ শতাংশ দক্ষতা অর্জন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এ আশার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিমান বাংলাদেশের পরিচালক মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, "এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের কাছে জাপানি প্রযুক্তি হস্তান্তর করা হবে। আমাদের কর্মীদেরকে জাপানের বিমানবন্দরের মতো একই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবা প্রদানের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।" সম্প্রতি জাপানের নারিতা এবং হানেদা ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দর সফরে একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন তিনি।
সুসংগঠিত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কার্যক্রম, বিশেষ করে চেক-ইন সিস্টেম, ব্যাগেজ ম্যানেজমেন্ট এবং এসব বিমানবন্দরের কার্গো অপারেশনে মুগ্ধ হয়েছেন তারা।
টিবিএসকে তিনি বলেন, "জাইকার সহায়তায় আমাদের পরিষেবার মানও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী।"
একবার প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে, রপ্তানি ও আমদানি কার্গো প্রক্রিয়াকরণের সময় ২০ শতাংশেরও বেশি কমে আসবে।
প্রকল্পের প্রস্তাব অনুসারে, হারিয়ে যাওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত কার্গোর সংখ্যাও কমে আসবে। ওয়্যারহাউজের দক্ষতা বাড়বে ৩০ শতাংশ।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কমপক্ষে ৯০ শতাংশ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তাদের জন্য একটি প্রণোদনা ব্যবস্থাও চালু করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, যার মধ্যে জাইকা দেবে ১৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। বাকি ৩০ লাখ দেবে বাংলাদেশ বিমান।
গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিমান বাংলাদেশের একটি প্রধান আয়ের উৎস হলেও, এখন পর্যন্ত তারা এ পরিষেবা তেমন উন্নত করতে পারেনি। এতে করে যাত্রীদের প্রায়ই দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
প্রতি বছর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং থেকে গড়ে ১৫০০ কোটি টাকা আয় করে বিমান বাংলাদেশ।
বারবার লাগেজের অব্যবস্থাপনা এবং ল্যান্ডিংয়ের পর যাত্রীদের লাগেজ পেতে যে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, এগুলোই বিমান বাংলাদেশ নিয়ে বেশ নিয়মিত কিছু অভিযোগ।
এসব কারণেই বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবার জন্য একটি বৈশ্বিক ফার্ম নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (সিএএবি)।
সিএএবি চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান সম্প্রতি বলেন, তারা তৃতীয় টার্মিনালে প্রত্যাশিত গ্রাউন্ড সার্ভিসের মানের একটি রূপরেখা প্রস্তুত করার জন্য একজন পরামর্শক নিয়োগ করেছেন।
সরকার-টু-সরকার (জিটুজি) পদ্ধতির অধীনে পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারিত্বের মাধ্যমে জাইকার বৃহৎ অর্থায়নে নির্মিত তৃতীয় টার্মিনালটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রস্তাব করেছে জাপান। এদিকে, সরকারও উন্মুক্ত দরপত্রে না যেয়ে জাপানের দিকেই ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে।
জাপান সরকারকে ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হলে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের রাজস্ব ভাগাভাগি কীভাবে কার্যকর হবে তার একটি আর্থিক মূল্যায়ন করতে বলেছে বিমান কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, যদি কোনো বিদেশি ফার্ম কাজ পায় এবং কর্তৃপক্ষ তাদের সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট হয়, তাহলে ফার্মটি গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সার্ভিসসহ বিমানবন্দরের পুরো রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পাওয়ার সুযোগ পাবে।