মৃত্যুর খরচ বাড়ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) কবরস্থানে ২৫ বছর কবর সংরক্ষণ করতে গুনতে হবে সর্বোচ্চ দেড় কেটি টাকা আর ১৫ বছরের জন্য পরিশোধ করতে হবে এক কোটি টাকা। এতদিন ১৫ বছর কবর সংরক্ষণের জন্য ফি ছিল সর্বোচ্চ ২৪ লাখ টাকা, আর ২৫ বছরের জন্য ছিল ৪৫ লাখ টাকা।
উত্তর সিটি বলছে, নগরবাসীকে কবর সংরক্ষণে নিরুৎসাহিত করতেই ফি বাড়ানো হয়েছে।
বুধবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কবরস্থানসমূহের নীতিমালা- ২০২২ প্রণয়ন করা হয়েছে। যেখানে উত্তর সিটির ৬টি কবরস্থানের জন্য ১৫ ও ২৫ বছর মেয়াদে কবর সংরক্ষণ ফি নির্ধারণসহ অন্যান্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।
উত্তর সিটির সচিব (অঃদাঃ) ড. মোহাম্মদ মাহে আলমের স্বাক্ষরিত নতুন এ নীতিমালা বুধবার (১৮ জানুয়ারি) থেকে কার্যকর হয়েছে।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ফি বাড়িয়েই কবর সংরক্ষণে নিরুৎসাহিত কিংবা সংখ্যা কমানো যাবে বিষয়টি এভাবে না ভেবে নগরবাসীর জন্য পর্যাপ্ত কবরস্থান তৈরি করতেও সিটি কর্পোরেশনকে উদ্যোগী হতে হবে।
উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কবরাস্থানসমূহের নতুন নীতিমালায় বনানী কবরস্থানে ১৫ বছর কবর সংরক্ষণের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১ কোটি টাকা এবং ২৫ বছরের জন্য দেড় কোটি টাকা।
এছাড়া সর্বনিম্ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানে কবর সংরক্ষণে। এ কবরস্থানে ১৫ বছর কবর সংরক্ষণের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা এবং ২৫ বছরের জন্য ১৫ লাখ টাকা। যা আগে ছিল ১৫ বছরের জন্য ৬ লাখ এবং ২৫ বছরের জন্য ১১ লাখ টাকা।
এছাড়াও উত্তর সিটির সংরক্ষিত কবরে পুনরায় কবর দেওয়ার খরচও বাড়ানো হয়েছে। বনানী কবরস্থানে খরচ বেড়েছে ২০ হাজার টাকা এবং অন্য কবরস্থানে এই খরচ বেড়েছে ১০ হাজার টাকা।
বনানী কবরস্থানে সংরক্ষিত কবরে পুনরায় কাউকে কবর দিতে হলে এখন ৫০ হাজার ৫০০ টাকা ফি দিতে হবে। আগে দিতে হতো ৩০ হাজার টাকা।
আর বাকি পাঁচটি কবরস্থানে পুনরায় কবর দিতে ফি দিতে হবে ৩০ হাজার ৫০০ টাকা। আগে দিতে হতো ২০ হাজার টাকা।
দুই যুগ আগে ১৯৯৬ সালে বনানী ও উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে স্থায়ীভাবে কবরের জন্য জায়গা কিনতে খরচ হতো ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে জায়গা কেনা যেত ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকায়। ২০০৫ সালের আগ পর্যন্ত টাকার পরিমাণ একই ছিল।
২০০৫ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত কবরের জন্য স্থায়ী জায়গা কেনা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন মেয়াদে কবর সংরক্ষণের ব্যবস্থা চালু হয়। এ ব্যবস্থাই এখনো চলছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা টিবিএসকে বলেন, "নগরবাসীকে কবর সংরক্ষণে নিরুৎসাহিত করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সবাই যেভাবে কবর সংরক্ষণ করতে চায় সেভাবে চলতে থাকলে পুরো ঢাকায়ও জায়গা দেওয়া যাবে না। আমাদের কবরস্থানের জায়গা কমে যাচ্ছে।"
এদিকে নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের বর্ধিত অংশের দেড় একর জায়গা সংরক্ষিত থাকবে; সেখানে শুধুমাত্র প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাফন করা হবে।
এছাড়াও মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত বিশেষ এলাকায় মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। তবে, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ইচ্ছানুযায়ী ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের যে কোন কবরস্থানে কবর সংরক্ষণ করতে পারবে।
নীতিমালায় আরও উল্লেখ আছে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্ধারিত সাধারণ কবরে ১০ বছর বিনামূল্যে কবর সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে প্রমাণ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত তালিকায় নাম থাকতে হয়। পরবর্তী সময়ের জন্য নির্ধারিত হারে ফি প্রযোজ্য হবে। তবে, কেবলমাত্র রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানে দাফনকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর আজীবন সংরক্ষিত থাকবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ টিবিএসকে বলেন, "ফি বাড়িয়েই কবর সংরক্ষণ কমানো কিংবা কবরস্থানে জায়গা বাড়ানো সম্ভব না। নগরবাসী সবারই অধিকার আছে মৃত্যুর পরে কবরের জায়গা নিশ্চিতের। তাই সিটি কর্পোরেশনের উচিত কিভাবে কবরস্থান বাড়ানো যায় সে বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা।"
বর্তমানে উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় ছয়টি কবরস্থান রয়েছে। এগুলো হলো: বনানী কবরস্থান, উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থান, উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর কবরস্থান, উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থান, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থান।
সরকারি ফি সহ ঢাকার কবরস্থানগুলোতে মৃতদের দাফন করতে ৬-১০ হাজার টাকা খরচ হয়। সাধারণভাবে এসব কবর ১৫-২০ মাস পর্যন্ত থাকে।
তবে কবরস্থানের রক্ষণাবেক্ষণকারীদের বিশেষ বকশিস দিলে তা আরও বেশি দিন অক্ষত থাকে বলে অভিযোগ নগরবাসীর।
এছাড়া উত্তর সিটির প্রত্যেকটি কবরস্থানে অগ্রিম কবর সংরক্ষণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে।