জুনের মধ্যে কালুরঘাট সেতু মেরামতের পরিকল্পনা রেলওয়ের, দরপত্র আহ্বান মার্চে
চলতি বছর ঢাকা-কক্সবাজার রুটে রেল চলাচলের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু মেরামত করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। পরামর্শক সংস্থা হিসেবে নিয়োজিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ দল চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে মার্চ মাসে দরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "পরামর্শক দলের স্টাডি প্রায় শেষ পর্যায়ে। তারা প্রতিবেদন দিলেই সেই অনুসারে আগামী মার্চে দরপত্র আহ্বান করা হবে। কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলের জন্য এটি মেরামত করা জরুরি।"
এর আগে গত বছরের ২২ এপ্রিল রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি কালুরঘাট সেতু পরির্দশনে পর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিদ্যমান সেতুটি বুয়েটের পরামর্শে মেরামতের পর আরও শক্তিশালী হবে এবং মেরামতের পর কালুরঘাট সেতু দিয়ে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। তবে সেতু পার হওয়ার সময় ট্রেনের গতি কম থাকবে।
গত ১৮ জানুয়ারি রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানান, চলতি বছরের জুন–জুলাইয়ের মধ্যে চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ প্রকল্পের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের তথ্যমতে, কালুরঘাট সেতুতে ১০ টনের বেশি লোড নেওয়া সম্ভব নয়। কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হলে সেতুতে সর্বোচ্চ লোড ১২ থেকে ১৫ টন পর্যন্ত হতে পারে। যেখানে মিটারগেজ ট্রেন ধীরগতিতে চালানো হলেও, ব্রডগেজ ট্রেন চালানো সম্ভব নয়।
নয় দশকের পুরোনো সেতুটিতে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে যানবাহন। কক্সবাজার প্রকল্পকে কেন্দ্র করে আলোচনায় আসে সেতু মেরামতের বিষয়টি। পদ্মা সেতুর আদলে নতুন একটি দ্বিতল সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে সেটি বাস্তবায়নে অন্তত সাত বছর সময় লাগবে। তাই কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলের জন্য বুয়েটের বিশেষজ্ঞ পরামর্শক নিয়োগ দিয়ে সেতু মেরামতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দোহাজারী–কক্সবাজার রেল প্রকল্পের কাজ ৮০ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। প্রায় ৭০ কিলোমিটারেরও বেশি রেললাইন এখন দৃশ্যমান। ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন চলতি বছরের সেপ্টেম্বর–অক্টোবরের মধ্যে যাত্রা আরম্ভ করার সম্ভাবনা বনা রয়েছে।
২০২১ সালের অক্টোবরে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের আমন্ত্রণে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও পর্যবেক্ষক দলের প্রধান ড. এ এফ এম সাইফুল আমিন, অধ্যাপক ড. খান মাহমুদ আমানত ও ড. আব্দুল জব্বার খান কালুরঘাট সেতু পরিদর্শন করেন। পরে একই বছরের ডিসেম্বরে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) আহসান জাবিরের কাছে পরিদর্শনের প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেন তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ৭ বছরের মধ্যে যেহেতু নতুন সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়, তাই পুরনো এই সেতু দিয়ে কক্সবাজারের ট্রেন নিতে হলে সেতুটিকে সেই উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। পরিদর্শনের সময় জানালিহাট অংশে অ্যাপ্রোচ রোডের সুরক্ষা দেয়ালে ফাটলসহ বড় ধরনের ৬টি ত্রুটি পেয়েছে দলটি।
১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বার্মা ফ্রন্টের সৈন্য পরিচালনা করার জন্য কর্ণফুলী নদীতে সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ১৯৩০ সালে ব্রুনিক অ্যান্ড কোম্পানি ব্রিজ বিল্ডার্স নামক একটি সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী নদীতে প্রথম সেতুটি নির্মাণ করে। মূলত ট্রেন চলাচলের জন্য ৭০০ গজ লম্বা সেতুটি ১৯৩০ সালের ৪ জুন উদ্বোধন করা হয়। পরে ১৯৫৮ সালে সব ধরনের যানবাহন চলাচলের যোগ্য করে সেতুটির বর্তমান রূপ দেওয়া হয়।