বেতন-বোনাস পেয়ে ঈদের কেনাকাটা বাড়িয়েছেন ক্রেতারা
রমজানের মাঝামাঝি সময়ে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। মূলত অফিসের বেতন-বোনাস আসতে শুরু করায় কেনাকাটা বাড়িয়েছেন ক্রেতারা।
রাজধানীর গাউছিয়া, মৌচাক ও বসুন্ধরা সিটি শপিংমলসহ বেশিরভাগ শপিংমল ও মার্কেটে শুক্রবার ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির চাপে তাদের বিক্রি আগের বছরের তুলনায় গড়ে ৩০% কমেছে।
ঢাকার গাউছিয়া মার্কেটে নয়না ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী সিদ্দিক আহমেদ বলেন, "জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিতে চাপের মধ্যে থাকায় এবার ক্রেতাদের মধ্যে দর কষাকষির প্রবণতা আরো বেশি। অধিকাংশই এখন কমদামী জিনিসের দিকে ঝুঁকছেন।"
"আমার কাছে ১ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা দামের পোশাক আছে। কিন্তু এ বছর ১ থেকে ২ হাজার টাকার পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে," দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, কর্মক্ষেত্রে বেতন-বোনাস আসতে থাকায় শুক্রবার ক্রেতার সংখ্যাও বেড়েছে। রমজানের প্রথম ১৫ দিনে ক্রেতার সংখ্যা ছিল বেশ কম।
বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের দেশি দশ আউটলেটের ব্যবস্থাপক শরীফুজ্জামান রানা জানান, এ বছর যে পরিমাণ বিক্রি হয়েছে তাতে সন্তুষ্ট নন তারা। "গত বছর আমরা রোযার শুরু থেকেই ক্রেতাদের ভিড় দেখেছি। কিন্তু এবার শুক্র ও শনিবার ছাড়া বিক্রি তেমন ভালো হচ্ছে না," বলেন তিনি।
রিচম্যান আউটলেটের ইনচার্জ মোহাম্মদ সেলিম বলেন, "মানুষ এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে বেশি ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছে। সেসব কেনার পর পোশাকের চিন্তা করে তারা। এ অবস্থায় আমাদের বিক্রি কমে আসা খুবই স্বাভাবিক।"
"আগের বছরের তুলনায় আমরা প্রায় ৩০% কম বিক্রি অনুমান করছি। তবে আমি মনে করি, বেতন-বোনাস পাওয়ার পর ক্রেতার সংখ্যা বাড়বে," বলেন তিনি।
মৌচাক মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, এ মুহূর্তে যদিও তারা প্রত্যাশার তুলনায় কম ক্রেতা পাচ্ছেন, ২০ রোযার পর বিক্রি দ্রুত বাড়বে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, মার্চ মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৯.৩৩%, যা সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও সরকারি তথ্য অনুযায়ী খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে, তারপরও পোশাকসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির চাপ সামলাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
বাড্ডা থেকে বসুন্ধরা শপিং মলে কেনাকাটা করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী জুয়েল রানা বলেন, "এ বছর কাপড়ের দাম অন্তত ১৫% বেড়েছে। দাম বাড়ার হাত থেকে বাঁচার উপায় নেই। তাই ঈদের কেনাকাটার জন্য আমাদের বাজেট কমে গেছে।"
"গত বছর ঈদের কেনাকাটার জন্য আমার বাজেট ছিল ১০ হাজার টাকা। এ বছর ৬ হাজার টাকা," বলেন তিনি। জুয়েল আরো বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের খরচ বাড়লেও তার বেতন একই আছে, এ কারণেই বাজেট কমাতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
বাবুবাজার থেকে নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে আসেন জোবায়ের বিন তাওহিদ। তিনি টিবিএসকে বলেন, কাপড়ের দাম যেভাবে বেড়েছে তা দেখে তিনি হতবাক। "প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। এটা একটা দ্বিগুণ চাপ। নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে," বলেন তিনি।
এদিকে, আবহাওয়া আরো উষ্ণ হতে থাকায় সুতি কাপড়ের বিক্রি বেড়েছে। এমনই জানালেন মৌচাকে কেনাকাটা করতে আসা মোহাম্মদ লাভলু। একটি সুতি শাড়ি ও পাঞ্জাবি কিনেছেন তিনি।
বাংলাদেশে জামাকাপড়ের বাজার ৩০ হাজার কোটি টাকার। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে এরমধ্যে ৭৫% বিক্রি হয় দুই ঈদেই।