ঈদ, পহেলা বৈশাখ: চট্টগ্রামে পোশাক বিক্রি ৩০% কমেছে, দাবি ব্যবসায়ীদের
ঈদুল ফিতর এবং বাংলা নববর্ষ– দুই উৎসবকে ঘিরে গত বছরের তুলনায় এবার বেশি পণ্য মজুদ করেছিলেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেচাবিক্রি আশানুরূপ হয়নি, বরং গত বছরের তুলনায় ব্যবসা কমেছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ।
এমন পরিস্থিতিতে হতাশ চট্টগ্রামের বিভিন্ন মার্কেট, শপিং মল, ছোট বড় পোশাকের দোকান, হকারসহ সব ধরনের ব্যবসায়ীরা। রোজার শুরু এবং মাঝামঝি সময়ে বেচাকেনা কম হলেও ব্যবসায়ীরা প্রত্যশা করেছিলেন কর্মজীবীরা বেতন–বোনাস পেলে রোজার শেষ দিকে বিক্রি বাড়বে। কিন্তু ঈদের আর মাত্র একদিন বাকি থাকলেও বেচাবিক্রি কাঙ্খিত মাত্রায় পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমলের ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ খুরশীদ আলম টিবিএসকে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর এবং জেলার সকল উপজেলায় পোশাকের দোকান আছে প্রায় ৬০ হাজার। ঈদ এবং পহেলা বৈশাখের বাজারকে কেন্দ্র করে সকল ব্যবসায়ী মিলে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন।
"কিন্তু দুটি প্রধান উৎসব এক সময়ে হলেও বেচাকেনা নিয়ে সন্তুষ্ট নন ব্যবসায়ীরা। গত বছরের তুলনায় এবার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমেছে বেচাকেনা," বলেন তিনি।
চট্টগ্রাম নগরীর কাপড়ের বৃহৎ পাইকারি ও খুচরা বিক্রয় কেন্দ্র টেরিবাজারের ওয়ান স্টপ শপিং মল পরশমনির মালিক মোহাম্মদ ইসমাইল টিবিএসকে বলেন, "আমাদের শপিং মলের বিক্রি এ বছর প্রায় ৩০ শতাংশ কম। অনেকেই আত্মীয়দের উপহার দেওয়ার জন্য কাপড় কিনতো। এবার আর্থিক সংকটের কারণে একাধিক পোশাক কিনছেন না কেউ। এর প্রভাব বিক্রিতে পড়েছে।"
চট্টগ্রামের পোশাক পণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার টেরিবাজার থেকে ক্রেতাদের পাশাপাশি চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার কাপড় ব্যবসায়ীরাও পাইকারি কাপড় কেনেন। এছাড়া ঈদে দরিদ্রদের উপহারের (যাকাত) শাড়ি লুঙ্গিো এই বাজার থেকে পাইকারি দরে কেনেন অনেকে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর বাজারে বেচাকেনা প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
মিমি সুপার মার্কেটে ব্যবসায়ী সমিতির সবেক সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, "মিমি সুপার মার্কেটে ২৬৩টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি গড়ে প্রায় সবাই এক থেকে দেড় কোটি টাকার উপরে বিনিয়োগ করেছেন। তবে ক্রেতা গতবারের তুলনায় কম। অন্যান্য বছর দুপুরের পর ক্রেতাদের ভীড় থাকলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। দিনের বেলায় ক্রেতার সংখ্যা আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে কমেছে।"
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির হিসেবে অনুযায়ী, চট্টগ্রাম শহরে ১৫টি অভিজাত ও ৫৮টি সাধারণ বিপণিকেন্দ্র রয়েছে। চট্টগ্রাম নগর ও জেলা মিলিয়ে মার্কেট ভিত্তিক ১০১টি সংগঠন দোকান মালিক সমিতির আওতাভুক্ত।
চট্টগ্রাম নগরীর নিউ মার্কেট, রেয়াজুদ্দিন বাজার, সানমার ওসান সিটি, সেন্ট্রাল প্লাজা, মিমি সুপার মার্কেট, আফমি প্লাজা, আমিন সেন্টার, এপোলো শপিং কমপ্লেক্স, আখতারুজ্জামান সেন্টার, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স, কেয়ারী, লাকি প্লাজা, খুলশি টাউন সেন্টার, ফিনলে স্কয়ার, ইউনেস্কো সেন্টার, অলংকার শপিং কমপ্লেক্স, পাহাড়তলি সিডিএ মার্কেট, জহুর হকার্স মার্কেট, টেরিবাজার, তামাকুমুন্ডি লেইনসহ ছোট বড় বিভিন্ন মার্কেটে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের বেচাকেনা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিভিন্ন উজেলার কাপড় ব্যবসায়ীরা রোজা শুরুর আগে এবং মাঝামাঝি সময়ে যে হারে কাপড় কিনতেন এবার সেটি কমে গেছে। ক্রেতার পরিমাণও কম। ফলে ব্যবসায়ীরা লোকসান না দিলেও কাঙ্খিত লাভ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
টেরিবাজারের মনেরেখ শপিংমলে কেনাকাটা করতে আসা শারমিন সুলতানা বলেন, "ঈদে পরিবারের সবার জন্য নতুন জামা কিনতে হবে তাই প্রতিবছরের মতো টেরিবাজারে চলে এলাম। মার্কেটে পছন্দের কাপড় মিললেও গত বছরের তুলনায় দাম বেশি।"
চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকা সংলগ্ন খলিফাপট্টি এলাকায় তৈরি হয় নতুন পোশাক। এখানকার ছোট বড় প্রায় ৩০০ কারখানা এবং ১৫০টি শো রুমে প্রায় ৬ হাজার কর্মী কাজ করেন। প্রতিবছর ঈদের সময়ে দৈনিক ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার পোশাক বিক্রি হলেও এবার বেচাকেনা কম বলে জানিয়েন ব্যবসায়ীরা। গত ৬ এপ্রিল খলিফাপট্টি ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম।
খলিফাপট্টি বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, রমজান মৌসুমে প্রতিটি সেলাই শ্রমিক প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয় করতে পারে। তবে এবার কাজ গত বছরের তুলনায় কম। প্রতিবছর যে পরিমাণ কাপড়ের অর্ডার পেতেন ব্যবসায়ীরা এবার সেটি পাওয়া যায়নি। ঈদের আগ পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা ৪ থেকে ৫ বার পোশাক নিয়ে গেলেও এবার সেটি হয়নি। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার পোশাকের দামও বেশি। এর প্রভাব পড়েছে বেচাকেনায়।
মার্কেট, শপিং মলের পাশাপাশি চট্টগ্রামের বিভিন্ন তারকামানের হোটেল, কমিউনিটি সেন্টার, উন্মুক্ত মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঈদ শপিং ফেয়ার। সেখানে লেডিস, জেন্টস আইটেম, কসমেটিকস সহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য বেচাকেনা হচ্ছে। মূলত অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন নারী উদ্যোক্তারা এসব মেলার বিক্রেতা।
চট্টগ্রাম ওমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তথ্যমতে, চট্টগ্রামে ২,৫০০ ফ্যাশন ও বুটিক হাউজ রয়েছে। এরমধ্যে ১,০০০ প্রতিষ্ঠান নিজস্ব কারখানায় পোশাক তৈরি করে।
চট্টগ্রাম সম্মিলিত হকার্স ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরীতে ২২,০০০ ভ্রাম্যমান দোকান (হকার) রয়েছে। এরমধ্যে ১৫,০০০ হকার পোশাক, জুতা, কসমেটিকস ইত্যাদি পণ্য বিক্রি করে।