হোম অ্যাপ্লায়েন্স বাজারে তাপদাহের প্রভাব, শো-রুমে নেই এসি
চলমান তাপপ্রবাহে রুম-কুলিং ডিভাইস এয়ার কন্ডিশনারের বিক্রি প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে ঢাকা শহরের হোম অ্যাপ্লায়েন্সের বাজারে। শোরুমগুলোতে এসির স্টক প্রায় ফুরিয়ে এসেছে।
বাসাবাড়িতে এক টন থেকে দুই টন ক্ষমতার এসির চাহিদা বেশি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ চাহিদা দেড় টন ক্ষমতার এসির। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় এসি কিনতে শোরুমে ভিড় করতে দেখা গেছে ক্রেতাদেরকে। তবে, তাদের মধ্যে কম সংখ্যক ক্রেতাই তা কিনতে সক্ষম হন।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সেলস এক্সিকিউটিভরা জানান, এসি বসানোর জন্য পর্যাপ্ত টেকনিশিয়ান নেই। এমনকি কারখানাগুলোতেও কম ইউনিটের এসির পর্যাপ্ত মজুদ নেই।
গ্রাহকদেরকে ঈদের ছুটি শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। ঈদের পর এসির সংকট কাটানো সম্ভব হবে বলে জানান তারা, সেইসাথে টেকনিশিয়ানরাও কাজে ফিরবেন।
অনেক ক্রেতাই এই গ্রীষ্মে বাড়িতে এসি বসানোর জন্য কয়েক মাস ধরে সঞ্চয় করেছেন। আবার অসহনীয় গরমের কারণে অনেকেই ঈদ বোনাস খরচ করে কিনেছেন এসি।
প্রচণ্ড গরমের কারণে অনেকটা বাধ্য হয়েই এক টনের একটি এসি কেনার সিদ্ধান্ত নেন বেসরকারি চাকরিজীবি আসিফ আহমেদ। তবে ঢাকার বেশ কয়েকটি শোরুম ঘুরেও কোনো এসি কিনতে পারেননি তিনি।
আসিফ আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ইলেকট্রোমার্ট, স্যামসাংসহ কয়েকটি শোরুম ঘুরে ওয়ালটনের চকবাজার প্লাজা এসেছি। এখানেও এক টনের এসি নেই। দেড় টনের এসি থাকলেও লাগানোর টেকনিশিয়ান নেই।"
"আগামীকাল নতুন প্রোডাক্ট আসলে বাসায় পৌঁছে দেবে এ শর্ত বুকিং দিয়ে এসেছি," বলেন তিনি।
ওয়ালটন চকবাজার প্লাজার বিক্রয়কর্মী ইমরান রহমান বলেন, প্লাজার স্টোরে যে জায়গা রয়েছে তাতে ১০০-১২০টির বেশি এসি রাখা যায় না।
"আবার জ্যাম ও ঈদের ছুটির কারণে টেকনিসিয়ানও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না," বলেন তিনি।
রাজধানীর পুরান ঢাকা, মগবাজার, বাড্ডা, ফার্মগেট, নবাবগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকার বিক্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতারা এসে ফিরে যাচ্ছেন।
ওয়ালটন, স্যামসাং, গ্রি, জেনারেল, শার্পসহ অনেক ব্র্যান্ডের এক টনের এসি বাজারে নেই বললেই চলে। দেড় টনসহ বেশি ওয়াটের কিছু এসি থাকলেও টেকনিশিয়ান সংকটে ক্রেতারা ফিরে যাচ্ছেন।
এসব প্রতিষ্ঠানের অনলাইন মার্কেট প্লেসেও সোল্ড আউট প্রায় সব ধরনের এসি।
ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্সের কারওয়ান বাজার শাখার ব্যবস্থাপক আরিফুর রহমান জানান, "অন্যান্য বছর গরমকালে আমাদের দৈনিক চার–পাঁচটা করে এসি বিক্রি হতো। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে দিনে ২০-২৫টা করে এসি বিক্রি হচ্ছে।"
"স্টক শেষ হওয়ার পর নতুন স্টক আনতে সময় লাগে। কাজের প্রেসারের কারণে টেকনিশিয়ানরা অসুস্থ হয়ে গেছেন। ফলে ইন্সটলেশনও করা যাচ্ছে না," বলেন তিনি।
মগবাজার বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, "গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে একটি ব্র্যান্ডের শোরুম থেকে দেড় টনের এসি কিনেছিলাম। আজ দুপুর পর্যন্ত এখনো সেটি ইনস্টল করতে পারিনি।"
"বিক্রয়কেন্দ্র থেকে আমাদের বলা হয়েছে, যে পরিমাণে এসি বিক্রি হয়েছে তার তুলনায় তাদের টেকনিশিয়ান কম। যেহেতু তারা পর্যায়ক্রমে কাজ করছেন, তাই একটু অপেক্ষা করতে হবে," বলেন তিনি।
দেশের বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত গ্রি এসির বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ইলেক্ট্রো মার্ট। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে গত এক সপ্তাহ ধরে তাদের এসি বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। এমনকি গত বছর এপ্রিলের তুলনায়ও এটি প্রায় দ্বিগুণ।
তবে এখন জনবল সংকট ও ঈদ ব্যস্ততার কারণে অতিরিক্ত চাহিদার যোগান দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।
ইলেক্ট্রো মার্টের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. নুরুল আফসার বলেন, "আমাদের ফ্যাক্টরিতে এসি আছে। তবে শোরুমে পৌঁছে দেওয়া বা টেকনিশিয়ান দিয়ে ইন্সটলেশন করার মতো লোকের ঘাটতি। সবাই ছুটিতে চলে গেছেন।"
বাজারে প্রায় ৩০ শতাংশ এসির যোগান দিচ্ছে লোকাল টেক জায়ান্ট ওয়ালটন।
স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি বিক্রি হওয়া এবং ঈদ কেন্দ্রিক সাপ্লাই চেইন সংকটে কারণে বাজারে চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ওয়ালটন এয়ার কন্ডিশনারের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার তানভীর রহমান সজীব।
তিনি বলেন, "এখনকার মতো এতো চাহিদা আগে কখনো হয়নি। কয়েকদিন ধরে প্রতিদিন ৩৫০০ থেকে ৪০০০ এসি বিক্রি হচ্ছে। আগে এটি এক হাজারের মতো হতো।"
"আমরা চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের সক্ষমতাও রয়েছে। তবে ঈদের বন্ধের কারণে সব করা যাচ্ছে না," বলেন তিনি।
"আমাদের ফ্যাক্টরিতে বছরে ২ লাখ ইউনিট এসি উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। পর্যাপ্ত কাঁচামালও আমদানি করা রয়েছে। এখন উৎপাদন করে শোরুমে নিয়ে আসা এবং ইনস্টলেশনের দিকটাতেই সংকট," যোগ করেন তিনি।
এস্কোয়ার ইলেক্ট্রনিক্সের চিফ মার্কেটিং অফিসার মঞ্জুরুল করিম বলেন, "এবার হিট ওয়েভের একটি আশঙ্কা ছিল। আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে চাহিদা বেশি থাকায় ইনস্টলেশন সংক্রান্ত সমস্যা ফেইস করতে হচ্ছে।"
দেশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এয়ার কন্ডিশনারের চাহিদা প্রতিবছরই বাড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে এর উৎপাদন।
এসির দাম মধ্যবিত্তের নাগালে আসায় এই যন্ত্রের বাজারও বড় হচ্ছে। কয়েক দিন ধরে ঢাকাসহ দেশের বড় অংশজুড়ে প্রচণ্ড গরমে বিক্রি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে এসির।
চলতি বছর ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ৭ লাখ ইউনিটের বেশি এসি বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
তারা বলছেন, চলতি মাসে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এসির বিক্রি ৫ গুণেরও বেশি।