ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী ঝড়সহ বৃষ্টি, আজ থেকে কমতে পারে তাপমাত্রা
বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে কালবৈশাখী ঝড়, সাথে ছিল বৃষ্টিও। গতকালের ঝড়-বৃষ্টির কারণে গরম অনেকটাই কমে স্বস্তি ফিরেছে এসব বিভাগে।
তবে বৃহস্পতিবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬.৪ ডিগ্রী। বুধবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বৃহস্পতিবার সকালেই ঢাকাসহ ছয় বিভাগে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। সকাল থেকে ঢাকার আকাশ রোদেলা ছিল। বিকেলের দিকে মেঘ জমতে থাকে।
সাড়ে চারটার পর মোটামুটি পুরো আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। সাড়ে ৫টার কিছু আগে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় ঝড়। তুমুল ঝড়ে ধুলোয় অন্ধকার হয়ে যায় চারিদিক। বিকেল সাড়ে ৫টার কিছু পরে শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টির মধ্যে ছিল কালবৈশাখীর দাপট, সঙ্গে ছিল বজ্রপাত।
কয়েকদিন বৃষ্টিহীন থাকায় দেশের তাপমাত্রা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং খুলনা বিভাগসহ রাজশাহী, পাবনা, পটুয়াখালী ও ভোলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগসহ পাবনা জেলার উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অধিকাংশ জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে।
সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তার কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে।
২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় ১ থেকে ৩ ডিগ্রী সে. হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় ২ থেকে ৫ ডিগ্রী সে. হ্রাস পেতে পারে।
আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক পূর্বাভাসে বলেন, দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া সাধারণত শুষ্ক থাকতে পারে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা বিভাগসহ রাজশাহী, পাবনা, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলাসমূহের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে এবং তা অব্যাহত থাকবে বলেও জানানো হয়।
আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আগামী পাঁচ দিন বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া দিনের ও রাতের তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা প্রবল।"
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রেকর্ডকৃত বৃষ্টির ফলাফল অনুযায়ী দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে ফরিদপুরে ২৮ মি.মি. এবং ঢাকাতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১ মি. মি.।
বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৩৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় ১৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের দু'এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।
নদীবন্দর সমূহের জন্য সতর্কবার্তায় বলা হয়, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া দেশের অন্যত্র পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘন্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে এপ্রিলের দ্বিতীয় দফার তাপপ্রবাহ চলছে। এর আগে গত ১৪ এপ্রিল থেকে দেশের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ শুরু হয়, যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে গত নয় বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। এরপর ১৮ এপ্রিল থেকে কমতে শুরু করে, ২৩ এপ্রিল এসে তা পুরোপুরি কেটে যায়।
১৭ এপ্রিল আগের নয় বছরের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ঈশ্বদীতে, ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ২০১৪ সালের মে মাসে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এছাড়া গত ১৬ এপ্রিল গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চতে পৌঁছে ঢাকার তাপমাত্রা, ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকায় ১৯৬৫ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে ১৯৬০ সালে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা ও বেসরকারি আবহাওয়া সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে ঘূর্ণিঝড়।
আর সাম্প্রতিক ইতিহাস বলছে, এই মে মাসে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলে তা আছড়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তবে সরকারিভাবে কোনো পূর্বাভাস এখনও মেলেনি।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল (গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম) দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ভারতের আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পূর্বে আন্দামান সাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়ে তা ১০ মে থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করছে। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হবে কিনা তা ১ মে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
তিনি বলেন, এপ্রিল, মে ও জুন এবং অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাস ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম। যেহেতু পুরো এপ্রিল মাসে উত্তর ও মধ্য বঙ্গোপসাগরে কোনো নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়নি, ফলে বঙ্গোপসাগরে ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় অনেক শক্তি জমা হয়ে গেছে।
এ কারণেই মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে ও অনুকূল পরিবেশ পেলে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার শঙ্কা বেশি।
এছাড়া আগামী কয়েকদিন ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ঝড় ও বজ্রবৃষ্টি বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলেও জানান তিনি।