ঋণ পরিশোধের সময়সীমা আবারও বাড়াতে চান পোশাক প্রস্তুতকারীরা
টেক্সটাইল মিলার ও তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারীরা ঋণ পরিশোধের সময়সীমা আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে উৎপাদন কম এবং সামগ্রিক ব্যবসা পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে সংকুচিত হওয়ার যুক্তিতে এমন দাবি জানিয়েছেন তারা।
২০২০ সালের মার্চে কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে খেলাপির সংখ্যা কমাতে ঋণ স্থগিতকরণ, ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোসহ ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার।
এরই ধারাবাহিকতায় ঋণের একটি ছোট অংশ পরিশোধের মাধ্যমে ঋণ পুনঃতফসিলের সময়সীমা শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৩০ জুন; এর পরপরই আবারও ঋণ পরিশোধের সময় বৃদ্ধির জন্য লবিং শুরু ব্যবসায়ীরা।
সেই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) একটি দল আজ (১৭ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে বসবে।
বিটিএমএ'র সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা বেশকিছু বিষয়ে নীতিগত সুবিধা চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে উপস্থাপন করবো।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বিটিএমএ বলেছে, 'দীর্ঘদিন যাবত টেক্সটাইল সেক্টরের মিলসমূহ পর্যপ্ত গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় উৎপাদন ক্ষমতার ৫০-৬০ শতাংশ ব্যবহার করতে পারছে না। যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানগুলো তারল্য সংকটে রয়েছে।'
'ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ডলার সংকটসহ অন্যান্য কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা বিরাজ করছে। এছাড়া, তৈরি পোশাক রপ্তানি আদেশ প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে, যার প্রভাব টেক্সটাইল খাতেও পড়েছে। এ কারণে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর টার্ম লোনসহ অন্যন্য ঋণ পরিশোধ কঠিন হয়ে পড়েছে,' বলা হয় চিঠিতে।
ব্যাংকিং খাতে গত তিন বছর যাবত গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধে নানান ধরনের সুবিধা পেয়েছেন। চলতি ২০২৩ সালের শুরু থেকে ঋণ পরিশোধের শিথিলতা তুলে ফেললেও তার ওপর স্থির থাকতে পারেননি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নতুন করে গত ২০ জুন একটি সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি বছরের এপ্রিল-জুন পর্যন্ত টার্ম লোন ও চলতি মুলধনী পরিশোধিত ঋণের মাত্র ৫০ শতাংশ পরিশোধ করলে খেলাপি থেকে মুক্তি সুবিধা দেয়। যদিও চলতি জুনে এর মেয়াদ শেষ হলেও ব্যবসায়ীদের চাহিদা আগামী ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সুবিধাটি বহাল থাকুক।
এ বিষয়ে বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করা শর্তে টিবিএসকে বলেন, "একদিকে ডলারের সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো সমস্যায় রয়েছে। এরমধ্যে গত কয়েক বছরে ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেওয়ায় ঋণের টাকা ফিরে পাচ্ছি না, এতে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে অনেক ব্যাংকে।"
তিনি বলেন, "এই মুহূর্তে ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হলে এমন সুবিধা দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এখন ঋণের টাকা না পেলে নতুন করে ঋণ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এতে সরকারের বার্ষিক প্রবৃদ্ধিও চরমভাবে ব্যাহত হবে।"
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকগুলোর হাতে ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা তুলে দেওয়ার পর ব্যাংকিংখাতে ব্যাপক পরিমাণ খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল বেড়েছে।
গত বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বরে) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৩,৭৪০ কোটি টাকা।
যদিও ২০২৩ সালের শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ পরিশোধের ছাড় তুলে নেওয়ার পর মার্চ (জানু-মার্চ) প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ১১,০০০ কোটি টাকা বেড়ে ১,৩১,৬২০ টাকায় দাঁড়ায়, যা মোট আউটস্ট্যান্ডিং (বকেয়া) ঋণের ৮.৮০ শতাংশ।
রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বাড়াতে চায় বিটিএমএ
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন লোন মরিটরিয়ম সুবিধার পাশাপাশি ইডিএফ সুবিধার আওতায় ঋণের সময় সীমা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন।
প্রতিষ্ঠানটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলেছে, 'আমরা ইডিএফ থেকে যে ঋণ সুবিধা পাই তা পরিশোধের মেয়াদ ছিল ২৭০ দিন। বর্তমানে তা কমিয়ে ১৮০ দিন করা হয়েছে, যা ঋণ পরিশোধে সমস্যা সৃষ্টি করছে।'
'টেক্সটাইল মিলে তুলা আমাদানির পর সুতা তৈরি এবং তা সরবরাহের পর সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারকদের নিকট থেকে প্রসিড আসা পর্যন্ত ২০০-২২০ দিনের মতো সময় প্রয়োজন। ফলে ১৮০ দিনের মধ্যে মিলগুলোর পক্ষে ঋণ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে যায়,' যোগ করা হয় চিঠিতে।
চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে এই তহবিলের আকার ছিল ৭ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আকার গত সাড়ে ছয় মাসে ২.৫ বিলিয়ন কমিয়ে বর্তমানে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার করা হয়েছে।
বিকেএমইএ'র সহ-সভাপতি ফজলী শামীম এহসান টিবিএসকে বলেন, "আমি মনে করি, কোভিডের চেয়ে এখনকার সমস্যা আরও জটিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের কোভিডকালে যে সুবিধাগুলো দিয়েছে, আমরা প্রায় যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করে দিয়েছে। এই সংকটে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া সুবিধাগুলো না কমিয়ে আরও বাড়ানো উচিত।"
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, "আমি মনে করি, এই মুহূর্তে কোনোভাবেই ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ পরিশোধের সুবিধা বাড়ানো উচিত নয়, কারণ ব্যাংকগুলো ব্যাপক সংকটে রয়েছে।"