বৃষ্টিহীন বর্ষাকালে গরমে নাকাল নগরবাসী
বর্ষাকালের মাঝামাঝি সময় পেরিয়ে গেলেও বৃষ্টিহীনতায় ভুগছে পুরো দেশ। দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলই এখনো বৃষ্টিহীন, সাথে বইছে তাপপ্রবাহ। এতে বিশেষ করে নগরীর জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বৃষ্টির এ বৈশিষ্ট্য বর্ষাকালের সাথে যায় না।
তবে দেশের সব বিভাগেই হালকা ও মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার এক পূর্বাভাসে এ তথ্য জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়, রংপুর, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী বিভাগের দু'এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, ঢাকা, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, পাবনা, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী ও মৌলভীবাজার জেলাসমূহের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা প্রশমিত হতে পারে। সাথে সাথে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এবছর জুলাই মাসে প্রায় ৫৯% বৃষ্টি কম হয়েছে। গত বছর জুলাই মাসে ৫৮% বৃষ্টি কম হয়েছে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চরমভাবাপন্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আর এর প্রভাব দিনদিন পরিলক্ষিত হচ্ছে।"
বুধবার দেশের কিছু কিছু জায়গায় সামান্য বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ঢাকা বিভাগের দুয়েক জায়গায় ১ থেকে ১০ মি.মি. পর্যন্ত সামান্য বৃষ্টি হতে পারে। ঢাকার তাপমাত্রা বুধবারে কিছুটা কমবে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবারে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় রাজশাহীতে ৩৭.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় বান্দরবানে ২৪.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে সামান্য বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। গোপালগঞ্জে ৭ মি.মি. ও নিকলিতে ১ মি.মি. বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। সর্বোচ্চ বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয় সিলেটে ৩০ মি.মি.। রাজশাহী বিভাগের কোথাও ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়নি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকার বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৫৯%। ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার কোথাও বৃষ্টির রেকর্ড করা হয়নি।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, "বর্ষার এমন আচরণ অতীতেও দেখা গেছে। সাগর থেকে প্রয়োজনীয় জলীয়বাষ্প স্থলভাগে আসতে পারছে না। তাই মৌসুমি বায়ুর নিষ্ক্রিয়তায় এ বৃষ্টিহীনতা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসহ আবহাওয়ার বিভিন্ন বিষয় এর জন্য দায়ী।"
বৃষ্টিহীন তপ্ত বাস্তবতা এ মুহূর্তে শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই খরা যাচ্ছে। গত শুক্রবার বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার শীর্ষ জলবায়ুবিদ গ্যাভিন স্মিট এক বিবৃতিতে জানান, চলমান জুলাই মাস হতে পারে শত শত বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ মাস। এছাড়া চলতি বছরের তুলনায় ২০২৪ সাল আরও বেশি উষ্ণ বছর হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২২ জুলাই পর্যন্ত রেকর্ড করা বৃষ্টিপাত অনুযায়ী স্বাভাবিকের চেয়ে রাজশাহীতে ৫৮ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া রংপুরে ৩২ শতাংশ, খুলনায় ৬০ শতাংশ, বরিশালে ৬৯ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, বর্তমান তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
তারা বলছেন, জুলাই মাসে এমন কম বৃষ্টি হয় না, তা নয়। এবার বৃষ্টি কম হচ্ছে, আগামী কয়েক বছর বৃষ্টি কম নাও থাকতে পারে। আবার কোনো এক বছর বৃষ্টি একেবারে কমে গেলো। এবার বৃষ্টি ও তাপমাত্রা স্বাভাবিক নয়, এটা বলা যায়।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এ অস্বাভাবিক বর্ষাকালের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রয়েছে। ২০১২ সাল থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব খুব বেশি দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে। মৌসুম শুরুর দিকে কিছুটা বৃষ্টি হয়েছে। এখন একটা ব্রেক যাচ্ছে, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হচ্ছে না। ওপরের বাতাসের কারণে সাগর থেকে জলীয়বাষ্প আসতে পারছে না। বৃষ্টি হওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।
তিনি আরও বলেন, সাগরে নিম্নচাপ হলে সেটা হয়তো প্রচুর জলীয়বাষ্প নিয়ে স্থলভাগে এসে বৃষ্টি ঝরাবে। ২৭ তারিখের পর থেকে সারা দেশের তাপমাত্রা কমতে থাকবে। তখন ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে।