জিপিএ-৫ পেয়েও কাঙ্ক্ষিত কলেজে সুযোগ পাবেনা প্রায় ৮০,০০০ শিক্ষার্থী
২০২৩ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) এবং সমমানের পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর, এখন অভিভাবকদের প্রধান চিন্তা হল তাদের সন্তানদের একটি ভালো কলেজে ভর্তি করানো।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির তথ্য অনুসারে, এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় মোট জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দেশের নামকরা ও মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আসন সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি। যদিও উত্তীর্ণ সকল শিক্ষার্থীদের সামগ্রিকভাবে ভর্তি করানোর সক্ষমতা রয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
"সারাদেশে কলেজ, মাদ্রাসা এবং ডিপ্লোমা প্রতিষ্ঠানে আনুমানিক ২৫ লাখ আসন রয়েছে। তবে, এ বছর পাশ করা ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬,৪১,১৪০ জন। তাই, কলেজে ভর্তির জন্য যোগ্য শিক্ষার্থীদের আসনের কোনো অভাব হবে না; এখানে সকলের জন্য পর্যাপ্ত আসন রয়েছে," দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এ কথা বলেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।
তিনি আরও বলেন, "সকল জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানো সম্ভব নয়। সমস্যা এড়াতে শিক্ষার্থীদের তাদের ফলাফল ও প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনা করে বিচক্ষণতার সাথে আবেদন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী সব এলাকাতেই ভালো মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।"
তবে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোট কত আসন আছে, তার সংখ্যা জানাতে পারেননি তিনি।
প্রায় সাড়ে ১১ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন নেওয়া হলেও মূলত লড়াই হবে ২৫০ প্রতিষ্ঠানে। এরমধ্যে প্রায় ২০০ কলেজ ও মাদ্রাসা এবং ৪৭টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, একটি গ্রাফিক্স আর্ট ইনস্টিটিউট ও একটি গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকস ইনস্টিটিউট রয়েছে।
এ ধরনের ২০টির মতো কলেজ ঢাকায় অবস্থিত। এগুলোতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন আছে ২০,০০০ মতো। তবে এগুলোর কয়েকটিতে বিদ্যালয় শাখা আছে। ফলে ভর্তির ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানের বিদ্যালয় শাখার শিক্ষার্থীরাই অগ্রাধিকার পাবে।
হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা বোর্ডের অধীনে ইংরেজি ভার্সন কলেজগুলোতে আসন সংখ্যা প্রায় ৫,০০০।
এদিকে, প্রতি বছরের মতো এবারও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য একটি সমন্বিত নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। আজ সোমবার (৩১ জুলাই) শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠকে এ নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
নীতিমালায় বড় কোনো পরিবর্তন না এলেও কলেজের ফি'তে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ভর্তি ফি ওই বৈঠকে চূড়ান্ত হবে।
খসড়া নীতিমালায় আগামী ১০ আগস্ট থেকে ভর্তির জন্য প্রথম ধাপে আবেদন শুরুর তারিখ প্রস্তাব করা হয়েছে। তিন ধাপে চলবে আবেদন প্রক্রিয়া। ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রক্রিয়া শেষ করে ভর্তির জন্য এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হবে।
আগামী ১ অক্টোবর থেকে কলেজে একাদশ ও মাদ্রাসায় আলিম শ্রেণিতে ক্লাস শুরু করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে ক্লাস শুরু হবে ৭ অক্টোবর।
আগেরবারের মতো এবারও ঢাকা শিক্ষাবোর্ড জানিয়েছে, একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে আগের মতোই এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে। ভর্তির জন্য কোনো পরীক্ষা নেওয়া হবে না। তবে চার্চ পরিচালিত তিনটি কলেজ– হলিক্রস, সেন্ট যোসেফ এবং নটর ডেম কলেজ নিজেদের মতো করে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের শিক্ষার্থী নির্বাচিত করতে পারবে। প্রতি বছরের মতো এবারও এই তিন কলেজ নিজস্ব পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করাবে বলে জানা গেছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, অনলাইনে সর্বনিম্ন ৫টি ও সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ বা সমমানের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করা যাবে। একজন শিক্ষার্থী যত কলেজে আবেদন করবে, সেগুলোর মধ্য থেকে মেধা, কোটা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে একটিমাত্র কলেজে তার অবস্থান নির্ধারণ করা হবে। আবেদেনকারীদের মধ্যে জিপিএ সমান হলে যাদের প্রাপ্ত নম্বর বেশি তারা প্রাধান্য পাবে।
ভর্তি বাবদ ফি ২০২৩ সালে একাদশে ভর্তির খসড়া নীতিমালায় ভর্তি ফি গত বছরের মতোই নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এতে কিছু পরিবর্তন হতে পারে।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি গত শুক্রবার বলেছেন, "নির্ধারিত ফির বাইরে যাতে কোনো প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে না পারে সেটি বিবেচনায় রেখে নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে।"
সেশন চার্জ ও ভর্তি বাবদ এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ঢাকা মেট্রোপলিটনে বাংলা ভার্সনে সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা, ইংরেজিতে ৫,০০০ টাকা; ঢাকার বাইরের মেট্রোপলিটন এলাকায় বাংলা ভার্সনে ৩,০০০, ইংরেজিতে ৩,০০ টাকা; জেলা শহরে বাংলায় ২,০০০, ইংরেজিতে ২,০০০ টাকা এবং উপজেলা/মফস্বল পর্যায়ে বাংলায় ১,৫০০ ও ইংরেজিতে ১,৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন ফি গ্রহণ করা যাবে না।
নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ঢাকা মেট্রোপলিটনে বাংলা ভার্সনে ৭,৫০০, ইংরেজিতে ৮,৫০০; ঢাকার বাইরে মেট্রোপলিটন এলাকায় বাংলায় ৫,০০০, ইংরেজিতে ৬,০০০; জেলা শহরে ৩,০০০ থেকে ৬,০০০ টাকা এবং উপজেলা/মফস্বলে ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল শুক্রবার (২৮ জুলাই) প্রকাশিত হয়েছে।
এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন। তবে দুর্ভাগ্যবশত, শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে আসনের সংখ্যা মাত্র এক লাখের কাছাকাছি।
ফলে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত প্রায় ৮০,০০০ শিক্ষার্থী তাদের কাঙ্ক্ষিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। সারাদেশে প্রায় ২৫০টি স্বনামধন্য কলেজ, মাদ্রাসা এবং ডিপ্লোমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।