কমপক্ষে ১৩টাকায় ডিম বিক্রি না হলে লোকসানে পড়বে খামারি: বিপিএ
সরকার ব্রয়লার মুরগির প্রতিটি ডিমের খুচরা বিক্রয়মূল্য সর্বোচ্চ ১২ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয় বলে ঘোষণা দিলেও প্রান্তিক খামারিরা তাতে একমত হতে পারছেন না।
খামারিদের দাবি, খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিম কমপক্ষে ১৩ টাকায় বিক্রি না হলে তাদের লোকসান হবে। একই সঙ্গে ১৬৭ টাকা উৎপাদন খরচের সাথে তুলনা করে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির যৌক্তিক দাম ২৩০ টাকা হওয়া উচিত বলেও জানান বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন (বিপিএ) এর নেতারা।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন (বিপিএ) ও তেজগাঁও, কাপ্তানবাজার ডিম ব্যবসায়ী সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিপিএ এর সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, "সরকার প্রতিটি ডিমের খুচরা মূল্য ১২ টাকা করতে বলেছে। কিন্তু এই দামে বিক্রি করলে খামারি লোকসান করবে, তারা টিকবে না। খুচরায় প্রতিটি ডিমের দাম অন্তত ১৩ টাকা হওয়া দরকার।"
"যদি ডিমের খুচরা দাম ১২ টাকায় রাখতে হয় তাহলে অবশ্যই একদিনের বাচ্চা ও ফিডের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে," বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, "সরকার সাড়ে ১০ টাকা উৎপাদন খরচের কথা বলেছে। কিন্তু প্রান্তিক খামারিদের প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০.৭৯ টাকা। সরকারের আইন অনুযায়ী যদি খামারিরা ৩০ শতাংশ লাভে ডিম বিক্রি নাও করে, অন্তত ১৫ শতাংশ তো দিতে হবে।"
ডিমের সাপ্লাই চেইনে কে কত লাভ করছে তার একটা হিসেব তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এ সময় বলা হয়, খামারি যে ডিম ১১ টাকায় বিক্রি করছে সেটা স্থানীয় আড়তদার ১০ পয়সা, শহরের আড়তদার ৩০ পয়সা, ভ্যানগাড়ি পাইকারি বিক্রেতা ৩৫ পয়সা, খুচরা বিক্রেতা ৫০ পয়সা ধরলে দাম গিয়ে দাঁড়ায় ১২ টাকা ২৫ পয়সায়। এর বাইরে ভাঙ্গা ডিমের লোকসান মিলে আরও ৮০ পয়সা খরচ বেড়ে যায়। সব মিলে দাম দাঁড়ায় ১৩ টাকা ৫ পয়সা।
ডিমের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৫০ পয়সা বলে ঘোষণা দেয়। এর প্রেক্ষিতে খুচরা পর্যায়ে ডিমের দাম ১২ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয় বলে জানান স ম রেজাউল করিম।
ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, "বর্তমানে খামারিরা ব্রয়লার মুরগিতে লোকসান গুনছে। প্রান্তিক খামারিদের প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৬৭ টাকা হলেও বর্তমানে তা ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ১৬৭ টাকার উৎপাদন খরচের মুরগিতে সরকারের আইন অনুযায়ী ৩০ শতাংশ লাভের জায়গায় ১৫ শতাংশ লাভ করলেও খামারে তার দাম হওয়া উচিত ১৯২ টাকা। যা কয়েক হাত ঘুরে ভোক্তা পর্যায়ে ২৩০ টাকায় বিক্রি হলে সেটা হবে যৌক্তিক মূল্য, যে মুরগি এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৭৮ টাকায়।"
সুমন হাওলাদার জানান, প্রান্তিক খামারিরা ডিম ও মুরগির বাজারে ৮০ শতাংশ বাজার দখল করলেও সিন্ডিকেট করছে কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা। পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রি সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) এর সংগঠনগুলোর সদস্যরাই এই সিন্ডিকেটে জড়িত। একদিনের বাচ্চার যখন বাড়তি চাহিদা তৈরি হয় তখন এর দাম ১০০ টাকাতেও নিয়ে যান তারা, যখন চাহিদা কম থাকে তখন আবার ১০ টাকাতেও নামে। এখন সরকার যদি একদিনের বাচ্চা আমদানি বন্ধ করে তাহলে সবটাই তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে।
খামারিদের দাবি, ২৭-২৮ টাকা উৎপাদন খরচের বাচ্চা যেন কোনভাবেই ৪০ টাকার বেশি না হয়। একইসঙ্গে ফিডের দাম কমানোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারলে ডিম ও মুরগির দাম আরও কমিয়ে আনা সম্ভব।