বাংলাদেশের সঙ্গে জাতীয়তা যাচাই চুক্তি করতে চায় ভারত
উভয় দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ করতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব দিয়েছে ভারত।
বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে এই চুক্তি করবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডেকেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ।
সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন) মো. সাইফুলে ইসলামের সভাপতিত্বে সভাটি অনুষ্ঠিত হবে। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সভা অনুষ্ঠানের আগে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
কম সময়ের মধ্যে নাগরিকত্ব যাচাই শেষ করতে ভারত দুই দেশে একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাবও দিয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র। এক থেকে তিন মাসের মধ্যে নাগরিকত্ব যাচাই শেষ করার প্রস্তাব করেছে দেশটি।
এ প্রস্তাবের বিষয়ে ঢাকা ইতিবাচক জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের অনেক মানুষ যেহেতু ভারতের কারাগারে বন্দি থাকে, তাই এ ধরনের একটি চুক্তি করা যেতে পারে।
ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশটির বিভিন্ন রাজ্যের কারাগারগুলোতে প্রায় ৩ হাজার বাংলাদেশি বন্দি রয়েছে। যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
সুরক্ষা সেবা বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, ভারত পার্শ্ববর্তী দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের অনেকেই পাসপোর্ট বা বৈধ অনুমোদন ছাড়াই দেশটিতে প্রবেশ করেন। পরিচিত ব্যক্তি, আবার কারোর কারোর আত্মীয় থাকার কারণে অনেকে পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতে যান। অন্যদিকে অনেকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও ভারতের সীমানায় ঢুকে পড়েন—বিশেষ করে সাগরে মাছ ধরার সময় জেলেদের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে বেশি।
জেলেরা সমুদ্রে দুই দেশের জলসীমা বুঝতে না পেরে ভুল করে বা অনিচ্ছাসত্ত্বেও ভারতের জলসীমায় চলে যান। তখন ভারতের কোস্টগার্ড তাদের গ্রেপ্তার করে। ওই সব জেলেদের দেশে ফেরত আসতে কয়েক মাস লেগে যায়।
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কয়েক লাখ মানুষ ভারতে যায়। ভারতের কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে বিদেশি পর্যটকের হিসাবে বাংলাদেশিদের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে ১২ লাখ ৫৬ হাজার বাংলাদেশি ভারতে গেছে।
একইভাবে ভারত থেকেও অনেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
কারা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে বর্তমানে প্রায় ৬০০ বিদেশি নাগরিক বন্দি আছেন। তাদের মধ্যে ১৫০-র বেশি ভারতের নাগরিক।
এখনকার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া
অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে একটি অংশ ভারত ও বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারের পরে অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তি যখন দাবি করেন যে তিনি বাংলাদেশ বা ভারতের নাগরিক, তখন সেটি দ্রুত যাচাই করার কোনো ব্যবস্থা্ বর্তমানে নেই।
অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং মামলা অনুযায়ী তাদের বিচার শেষে শাস্তি হিসেবে জেল ও জরিমানা হয়ে থাকে। জেল খাটা শেষ হলে তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানোর সময় নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কারণ কোনো দেশ অভিযুক্ত ব্যক্তির নাগরিকত্ব নিশ্চিত না হয়ে অন্য একটি দেশে পাঠিয়ে দিতে পারে না।
এজন্য জেলে থাকা অবস্থায় ওইসব ব্যক্তির দাবি অনুযায়ী নাগরিকত্ব যাচাই করা হয়।
নাগরিকত্ব যাচাই করতে আটক ব্যক্তির দাবি করা দেশের দূতাবাসে চিঠি দেওয়া হয়। দূতাবাস সেই চিঠি সংশ্লিষ্ট দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আটক ব্যক্তির দাবি করা জেলা প্রশাসককে জানায়। তারপর স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তার নাগরিকত্ব যাচাই করে প্রতিবেদন পাঠানো হয়।
এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কমপক্ষে ৬ মাস সময় লেগে যায়।
কাতার, ব্রুনাই, মরিশাসের সঙ্গে চুক্তি
এদিকে ব্রুনাই ও মরিশাস বাংলাদেশের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ দেশ দুটির প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে।
এর আগে কাতার বন্দি বিনিময় চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিল। কাতারের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ গত মাসে মতামত পাঠিয়েছে। কাতারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি।
বন্দি বিনিময় চুক্তি হচ্ছে এমন একটি চুক্তি, যার আওতায় কোনো অপরাধে ওই দেশের আইন অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত হয়ে যারা জেল খাটছেন, তাদেরকে নিজের দেশের জেলে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়।
অর্থাৎ কোনো বাংলাদেশি নাগরিক ব্রুনাই বা মরিশাসে অপরাধ করে ২ বছরের কারাভোগের শাস্তি পেলেন। ওই ব্যক্তি এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের জেলে এই দুই বছর কাটাতে পারবেন এবং যখন ব্রুনাই বা মরিশাস তাকে কারামুক্ত ঘোষণা করবে, তখন তিনি মুক্তি পাবেন। অথবা এ ধরনের ব্যক্তির পরিবারও আবেদন করে তাকে দেশের জেলে নিয়ে আসতে পারবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কাতার, ব্রুনাই, মরিশাসে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন। এসব দেশে অনেক বাংলাদেশি নানান অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে কারাদণ্ডের শাস্তি পেয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশগুলো এ ধরনের চুক্তির প্রস্তাব করেছে।
তবে বাংলাদেশ এ বিষয়ে সতর্ক। অহেতুক অপরাধীদের দেশে আনতে কোনো পক্ষই উৎসাহিত হয় না বলে জানান কর্মকর্তারা।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এ ধরনের চুক্তি রয়েছে। এ চুক্তির আওতায় ভারত থেকে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে বাংলাদেশে জেল খাটছেন কয়েকজন।