ঢাকার হেমায়েতপুরে নির্মিত হচ্ছে প্রথম বহুতল বাস টার্মিনাল
ঢাকার হেমায়েতপুরে নির্মাণ করা হবে প্রথম বহুতল আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল। রাজধানীতে যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ঢাকার উপকণ্ঠে এ ধরনের পরিকল্পিত চারটি টার্মিনালের মধ্যে এটিই প্রথম।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) হেমায়েতপুরে ৪৪ একর জায়গাজুড়ে অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এই টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। সে অনুযায়ী, এই জায়গায় ৬ তলা বিশিষ্ট দুটি টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করা হবে, যেখানে তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার বাস রাখা যাবে। এর সাথে থাকবে একটি ডিপো। এছাড়াও প্রাইভেট কার বা ব্যক্তিগত গাড়ি রাখার জন্য থাকবে দুটি তলা। প্রতিটি তলায় ৪৬টি করে গাড়ি রাখা যাবে।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে গাবতলীর ব্যস্ততম বাস টার্মিনালটি হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হবে। প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, এ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। আগামী বছর এ টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরুর কথা রয়েছে। চার বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষে টার্মিনালটি যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
ডিএনসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী নাঈম রায়হান খান জানান, ৬ তলা বিশিষ্ট টার্মিনালটির চারটি তলা থাকবে যাত্রীবাহী বাসের জন্য। প্রতিটি তলায় ৪৩২টি করে বাস রাখা যাবে। এছাড়া ডিপোতে আরো এক হাজার বাস রাখার মতো জায়গা থাকবে। তবে বিস্তারিত নকশা তৈরির পর পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যাবে।
ডিএনসিসির কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছিলেন, টার্মিনালটির নির্মাণের লক্ষ্য যাত্রীদের পরিষেবা বাড়ানোর পাশাপাশি নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা তৈরি করা। এসব সুবিধার মধ্যে রয়েছে আন্তঃজেলা ও শহরের মধ্যে চলাচলকারী বাসগুলোর জন্য আলাদা প্রবেশ ও বের হওয়ার ব্যবস্থা, আন্তঃজেলা বাস ডিপো সুবিধা, মাল্টি-মডেল কানেক্টিভিটি, ব্যক্তিগত যানবাহন রাখার জন্য দুটি তলা এবং যানবাহনগুলো থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা।
এর আগে ঢাকায় বাস চলাচল সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিক কাঠামোয় আনার লক্ষ্যে ডিএনসিস ও ডিএসসিসির (ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন) দুই মেয়রের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত একটি সম্ভাব্যতা পর্যালোচনার পর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালগুলো স্থানান্তরের জন্য চারটি সম্ভাব্য স্থান নির্বাচন করে। হেমায়েতপুরের পাশাপাশি অন্য তিনটি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য গ্রাম ভাটুলিয়া, কাঁচপুর এবং বাঘাইর এলাকা নির্বাচন করা হয়।
বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঢাকায় চারটি নতুন আন্তঃনগর বাস টার্মিনাল নির্মাণের পাশাপাশি গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল শহর থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে।
গাবতলীকে ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকা হিসেবে স্বীকার করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করছেন, টার্মিনালটি স্থানান্তর করা হলে বিমানবন্দর সড়কে যানজট উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। হেমায়েতপুরের প্রস্তাবিত জায়গাটি এমআরটি লাইন ৫ স্টেশন এবং ডিপো এলাকার সাথেই অবস্থিত। ফলে গণপরিবহন ব্যবস্থা আরো উন্নত হবে।
ইতোমধ্যে প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে জমা দিয়েছে ডিএনসিসি। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে প্রকল্পটির জন্য বিদেশি ঋণ পেতে প্রস্তাবটি ইকোনোমিক রিলেশনস ডিপার্টমেন্টের কাছে পাঠানো হবে।
প্রকল্পটি ঢাকার ট্রাফিক সমস্যা মোকাবেলায় সরকারের বৃহত্তর কৌশলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো নিয়ন্ত্রিত, নির্ভরযোগ্য, নিরাপদ ও আরামদায়ক গণপরিবহন পরিষেবা নিশ্চিত করা, ব্যক্তিগত পরিবহনের ওপর বর্ধিত নির্ভরতা কমানো।