হালকা প্রকৌশল শিল্পের অগ্রগতিতে প্রয়োজন পুঁজি, প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ, নীতিগত সমর্থন: বিশেষজ্ঞ
বাংলাদেশের হালকা প্রকৌশল শিল্প (লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং) খাতের সম্ভাবনাকে পুঁজি করার জন্য বৈশ্বিক চাহিদা বোঝা এবং স্টেকহোল্ডারদের সক্ষমতা জোরদারের ব্যবস্থা নেওয়ার জরুরি প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) 'আনলিশিং দ্য এক্সপোর্ট পোটেনশিয়াল অব লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ নেটওয়ার্কের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বিশেষজ্ঞরা এ খাতের প্রবৃদ্ধির জন্য কিছু নীতিগত অসঙ্গতি দূর করা, একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহজলভ্যতা, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও দক্ষতা উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিইওএ) সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে বিশ্ববাজারের আট ট্রিলিয়ন ডলারের মধ্যে বাংলাদেশের দখলে ১ শতাংশও নেই। এই বাজার ধরতে হালকা প্রকৌশল খাতে দেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রয়োজন। যেটা তাইওয়ান করেছে। থাইল্যান্ড এখন করছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়াতেও এটা হচ্ছে। এর আগে গুজরাটে হয়ে গেছে।'
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'পুঁজি, আধুনিক প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ, পলিসি সাপোর্ট, পরিকল্পিত অর্থনৈতিক অঞ্চল। এই পাঁচটা একসঙ্গে শুরু করতে হবে। দেখা গেল টাকা পাওয়া গেল কিন্তু জায়গা নেই কারখানা করার, সেটা হবে না।'
ডিনেটের নির্বাহী পরিচালক এম শাহাদাত হোসেন এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ডক্টর মুহাম্মদ শরীয়ত উল্লাহর যৌথ সঞ্চালনায় বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুর রহিম খান মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন।
আবদুর রহিম খান বলেন, 'বৈশ্বিক চাহিদার পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে এখন একটি অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ প্রয়োজন।'
তিনি আরও বলেন, 'উন্নত দেশগুলো এখন লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিবর্তে হাই-টেক ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের দিকে ঝুঁকছে। এই প্রবণতা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য সুযোগ তৈরি করছে।'
ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সভাপতি মির্জা নুরুল গনী শোভন বলেন, 'লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের উন্নয়নের জন্য নির্দিষ্ট সময়বদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন। আমাদের দেশের চাহিদার সঙ্গে কীভাবে রপ্তানি বাড়ানো যায়, তা এই কর্মপরিকল্পনায় থাকবে।
তিনি বলেন, 'রপ্তানিমুখী ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি স্থানীয় লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং উদ্যোক্তাদেরও সরকারের নীতিগত সহায়তা পেতে হবে।'
বাংলাদেশ বাইসাইকেল অ্যান্ড পার্টস ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিবিপিএমইএ) মহাসচিব লুৎফুল বারী বলেন, 'চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, সিঙ্গাপুর ও জাপান এই পাঁচটি দেশ ২.৫১ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য আমদানি করে থাকে। আমরা যদি ফোকাস করি, তাহলে আমরা এসব দেশে পণ্য রপ্তানি করতে পারব। কারণ তারা এখন উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য তৈরির দিকে ঝুঁকছে।'
বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এ খাতে ২০১৭-১৮ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত রপ্তানি মূল্যে ওঠানামার প্রবণতা দেখা গেছে। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতে রপ্তানি মূল্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়ে ৫২৯ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। পরের অর্থবছরে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ৭৯৫.৬৩ মিলিয়ন ডলার। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি মূ্ল্য কমে দাঁড়িয়েছে ৫৮৫.৮৫ মিলিয়ন ডলার।