জুলাই থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান আসছে সর্বজনীন পেনশনের আওতায়
এ বছরের ১ জুলাইয়ের পরে নিয়োগ পাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) অর্থ বিভাগের প্রবিধান শাখার জারি করা এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, জুলাই থেকে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার অধীনে 'প্রত্যয়' নামক একটি নতুন স্কিম চালু করা হবে।
যারা বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন, তারাও কমপক্ষে ১০ বছর চাকরি থাকা সাপেক্ষে এ স্কিমে যোগ দিতে পারবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়ে।
নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান একজন চাকরিজীবীর মূল বেতনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা — যেটি বেতনের চেয়ে কম হবে — তা কেটে নেওয়ার পাশাপাশি একই পরিমাণ অর্থ ওই চাকরিজীবীর অ্যাকাউন্টে জমা রাখবে। চাকরিজীবী চাইলে তার চাঁদার হার বাড়িয়ে তা ব্যক্তিগতভাবে পরিশোধ করতে পারবেন।
কোনো চাকরিজীবী কমপক্ষে টানা ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার পর মাসিক পেনশন পাবেন। আর যদি তিনি ১০ বছরের কম সময়ের জন্য চাঁদা দেন, তাহলে লভ্যাংশসহ এককালীন অর্থ ফেরত পাবেন।
একজন চাকরিজীবী ৪২ বছর ধরে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিলে তিনি প্রতি মাসে তিন লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৫ টাকা হারে পেনশন পাবেন। আর কেউ যদি ১০ বছরের জন্য চাঁদা দেন, তাহলে তার মাসিক পেনশন হবে ১৫ হাজার ৩০২ টাকা।
এ প্রথম সরকার কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারি পেনশন ব্যবস্থায় যোগদান বাধ্যতামূলক করল।
বর্তমানে স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং পেনশন ব্যবস্থা না থাকা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোয় কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড রয়েছে। এ তহবিলে কর্মীরা তাদের মূল বেতনের ১০ শতাংশ এবং কোম্পানি ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ জমা রাখে।
এ তহবিল থেকে কর্মীরা অবসরকালীন সুবিধা পান। এছাড়া চাকরিজীবী দুই মাসের মূল বেতনের সমান একটি বার্ষিক আনুতোষিক ভাতাও পান যা মূলত সরকারি বাজেট থেকে দেওয়া হয়।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, এ সিদ্ধান্ত একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে সরকারি চাকরিতে যারা নিয়োগ পাবেন, তাদের জন্যও একই ব্যবস্থা দ্রুত কার্যকর করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, কর্পোরেশন বা আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরি করেন, তাদের সঙ্গে সরকারি চাকরিজীবীদের সুবিধার ব্যবধান পূরণ করতে সরকারি কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
অর্থ বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, এ সিদ্ধান্তের দুটি সুবিধা রয়েছে — পেনশন বাবদ সরকারের ব্যয় কম হবে এবং পেনশন তহবিলের আকার বাড়বে।
তিনি পেনশন অথরিটি বোর্ডে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্ব এবং স্কিমের সহজলভ্যতা বাড়াতে জেলাপর্যায়ে পেনশন অফিস গঠনের প্রস্তাব দেন।
যারা অন্তর্ভুক্ত হবে
সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যাডেট কলেজ; কর্পোরেশন; বিডা, বেজাসহ সব ধরনের কর্তৃপক্ষ; সরকারি ব্যাংক; শিক্ষা বোর্ড; রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি; ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ সব ধরনের ইনস্টিটিউট; বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন বোর্ড; পেট্রোবাংলা, ওয়াসার মতো প্রতিষ্ঠান; টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনসহ সব ধরনের কমিশন, সব ধরনের কাউন্সিল, সব ধরনের বন্দর সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হলো।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বর্তমান পরিস্থিতি
সরকার ১০ কোটি লোককে পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনতে ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট চারটি পেনশন স্কিম প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা, ও প্রবাস চালু করে।
এ বছরের ২ মার্চ পর্যন্ত এসব স্কিমে ২১ হাজার ৯৫ জন নিবন্ধন করেছেন। তহবিলে মোট চাঁদা জমা হয়েছে ৩২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
তবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণে সন্তুষ্ট নন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় পেনশন স্কিমকে আরও আকর্ষণীয় করতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ।
সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান-২০২২ অনুসারে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোতে প্রায় ১৪ লাখ কর্মরত জনবলসহ মোট ১৯ লাখ পদ রয়েছে।
এর মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং কর্পোরেশনগুলোতে মোট চার লাখ ১৫ হাজার ৩৪১টি পদের বিপরীতে কর্মী রয়েছে দুই লাখ ৫৭ হাজার ৫২২ জন।
চলতি অর্থবছরে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধাবাবদ ৩২ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।