নীলগাইয়ের দেখা মিলছে বাংলাদেশে, আবারও ফিরতে পারবে বিলুপ্তঘোষিত প্রাণীটি?
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি গ্রামীণ এলাকায় এশিয়ান অ্যান্টিলোপ হরিণের সবচেয়ে বড় প্রজাতি নীলগাই ভারত থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করে। এর পরে আর ফিরে যাওয়া হয়নি এটির।
ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার বাসিন্দা রায়হান আলম জানান, গ্রামবাসীরা নীল ষাঁড় হিসেবে পরিচিত নীলগাইয়ের খবর জানতে পেরে প্রাণীটিকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে।
রায়হান আরও জানান, খবর ছড়িয়ে পড়ার পর উত্তেজিত গ্রামবাসীরা ঘটনাস্থলে ভিড় করে নীল ষাঁড়টিকে জবাই করে। পরে পশুটির মাংস ভাগ করে খেয়ে ফেলা হয়।
এর আগে আরেকটি নীলগাইও অল্পের জন্য একই পরিণতি থেকে রক্ষা পেয়েছিল। সেটিও ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর ভারত থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করে। তবে ভাগ্য ভালো বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী এটিকে দেখতে পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় ধরে ফেলে।
ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গির বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ জানান, পরে নীলগাইটিকে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বাংলাদেশে বোসেলাফাস ট্রাগোক্যামেলাস প্রজাতির দুটি নীলগাইয়ের উপস্থিতি আশাব্যঞ্জক। আইইউসিএন লাল তালিকা অনুসারে নীলগাইকে বিপদগ্রস্ত (থ্রেটেনড) হিসেবে বিবেচনা করা হয় না কারণ ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তানে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে প্রাণীটি। কিন্তু বাংলাদেশে নীলগাইকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে ত্রিশের দশকে, প্রায় এক শতাব্দী আগে।
২০২৩ সালের একটি গবেষণায় বাংলাদেশের গবেষকেরা ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ভারত এবং নেপাল থেকে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে নীলগাই প্রবেশের ১৩টি ঘটনা চিহ্নিত করতে গণমাধ্যমের খবর ঘেঁটে দেখেন।
ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে প্রচুর নীলগাই ছিল। ব্রহ্মপুত্র এবং গঙ্গা নদী প্রাকৃতিক বাধা হিসেবে কাজ করার কারণে তারা সহজেই আর পূর্বদিকে অগ্রসর হতে পারত না। বর্তমান দিনাজপুর ও রংপুর জেলার শালবন ও প্লাবনভূমিতেও একসময় এ প্রাণীটির প্রাচুর্য ছিল।
বৈশ্বিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ আইইউসিএনের বাংলাদেশ কার্যালয়ের প্রধান বন্যপ্রাণী তদন্তকারী সারওয়ার আলম ব্যাখ্যা করে বলেন, অনিয়ন্ত্রিত শিকারের পাশাপাশি উপযুক্ত আবাসস্থল ধ্বংসের ফলে বাংলাদেশে নীলগাইয়ের স্থানীয়ভাবে বিলুপ্তি ঘটেছে। কিন্তু এখন আবার নীলগাইয়ের তার আবাসস্থলে ফিরে আসা এটা ইঙ্গিত দেয় যে, বাংলাদেশে আবারও এই প্রজাতি বাসস্থান তৈরি করতে পারে।
সাম্প্রতিক গবেষণার লেখকেরা প্রস্তাব করেছেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দেশের উত্তরপশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলীয় আর্দ্র বনাঞ্চলে নীলগাই পুনঃপ্রবর্তনের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। নীলগাইয়ের দেখাশোনা সহজ বলে জানান তারা।
সারওয়ার আলম একমত পোষণ করে বলেন, ভারত সীমান্তের নিকটবর্তী উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে একটি সুরক্ষিত এলাকা প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে, যেখানে এখনও অক্ষত প্রাকৃতিক জমির বিশাল অঞ্চল রয়েছে।
যদি নীলগাই আবার ফিরিয়ে আনা হয়, তবে মানুষকে শিকার করতে এবং ষাঁড় ভেবে না খেতে শিক্ষামূলক প্রচারণা চালাতে হবে।
রানিশংকৈলের বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, প্রতি বছর এখানে অনেক হরিণ আসে। তবে হাতেগোনা কয়েকটি ঘটনার কথা জানা যায়। বেশিরভাগ সময় গ্রামবাসীরা তাদের মাংসের জন্য হত্যা করে।
বন বিভাগের ঠাকুরগাঁও রেঞ্জের কর্মকর্তা তাসলিমা খাতুন বলেন, নীলগাই নিধন নিরুৎসাহিত করতে বন অধিদপ্তরের প্রাথমিক কর্মসূচি রয়েছে।
তিনি বলেন, 'আমরা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে গেলে গ্রামবাসীদের ভারত থেকে আসা নীলগাইদের হত্যা না করার আহ্বান জানাই।'
সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ও আইইউসিএনে বাংলাদেশের সাবেক কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইশতিয়াক উদ্দিন আহমদ বলেন, 'বাংলাদেশে নীলগাইয়ের জনসংখ্যা পুনরুদ্ধারে নিরবচ্ছিন্ন বনাঞ্চল ও কিছু ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।'
তিনি বলেন, 'নীলগাইদের তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থলে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে, তবে তাদের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা, খাবার এবং জল নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।'
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন