বছরের প্রথম ৩ মাসে শিশুহত্যা ১৩৯, শিশুর আত্মহত্যা ২৭: আইন ও সালিশ কেন্দ্র
দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরের প্রথম তিনমাসে সারাদেশে অন্তত ১৩৯ শিশু নিহত হয়েছে।
জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ের মধ্যে ১০টি জাতীয় দৈনিক এবং অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদনটি সোমবার (১ এপ্রিল) প্রকাশ করেছে আইনি সহায়তা ও মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থাটি।
এছাড়া, এ সময়ের মধ্যে আরও ২৭ শিশু আত্মহত্যা করেছে। সারাদেশ থেকে আরও ৩২ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
মোট ৩২৫ শিশু নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। ১৪ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়, যাদের মধ্যে একজনকে পরে হত্যা করা হয়।
'২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিনমাসের মানবাধিকার পরিস্থিতির পরিসংখ্যানগত পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু, সীমান্তে হত্যা, সাংবাদিক নিপীড়নসহ মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা প্রদানের মতো ঘটনার মধ্য দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে চলেছে,' আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়।
কারা হেফাজতে মৃত্যু ৩৫
বছরের প্রথম তিনমাসে সারাদেশের বিভিন্ন কারাগারে কমপক্ষে ৩৫ জন বন্দি মারা গেছেন। এদের মধ্যে ২১ জন বিচারাধীন (হাজতি) ছিলেন এবং ১৪ জন দোষী সাব্যস্ত (কয়েদি) হয়েছিলেন।
এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ১১ জন হাজতি ও সাতজন কয়েদি তথা মোট ১৮ বন্দির মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত আসকের পূর্ববর্তী প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে কারা হেফাজতে মোট ৯৩ বন্দি মারা গেছেন। ২০২২ সালে এ ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৬৫।
রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ২৩
আসকের তথ্য অনুযায়ী, একই সময়ে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছেন। এ তিন মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
এ সময়ে অন্তত ২৬৮টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত দুই হাজার ৩৬৮ জন।
৮১ সাংবাদিক নির্যাতন-হয়রানির শিকার
আসকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম তিনমাসে ৮১ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি, মামলা ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন।
সীমান্তে নিহত ৬
আসক জানিয়েছে, সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর গুলি ও নির্যাতনে নিহত হয়েছেন ছয় বাংলাদেশি নাগরিক। এছাড়া আহত হয়েছেন চারজন।
এছাড়া মায়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তর থেকে আসা মর্টার শেলের আঘাতে এক বাংলাদেশি নাগরিক এবং এক রোহিঙ্গা ব্যক্তি নিহত হন।
১১৪ নারী ধর্ষণ, ৩ জনকে হত্যা, ১ জনের আত্মহত্যা
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম তিনমাসে কমপক্ষে ১১৪ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে পরে অপরাধীরা হত্যা করে এবং একজন আত্মহত্যা করে মারা যান। এছাড়া ৩১ জন নারীর ওপর ধর্ষণচেষ্টা চালানো হয়েছে।
যৌন হয়রানি: প্রতিবাদ করায় নিহত ৫, একজনের আত্মহত্যা
উল্লিখিত সময়ে ৫৫ জন নারী ও ২৪ জন পুরুষ – মোট ৭৯ ব্যক্তি বিভিন্ন যৌন হয়রানিকেন্দ্রিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন নারী পরে আত্মহত্যা করে মারা যান।
এ সময় যৌন হয়রানির ঘটনার প্রতিবাদ করায় চারজনকে খুন করা হয়েছে।
পারিবারিক নির্যাতন: ৬৫ নারী খুন, আত্মহত্যা ৪৯
জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ১৩৭ নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আরও ৪৯ জন পরে আত্মহত্যা করে মারা যান।
যৌতুকের জন্য খুন ৫
একই সময়ে যৌতুকের জেরে পাঁচ নারীকে হত্যা করা হয়েছে। আত্মহত্যা করে মারা যান আরও দুজন।
এছাড়া মোট ২৩ জন নারী শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ জন যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
গৃহকর্মী নিহত ৫
জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ে কমপক্ষে পাঁচজন গৃহকর্মী মারা গেছেন। এ সময়ে মোট সাতজন গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
ধর্মীয় সংখ্যালঘুর ওপর নির্যাতন
আসকের প্রতিবেন অনুযায়ী, বছরের এ সময়ে ২০টি ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৩টি বাড়িঘর ও ২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হামলার শিকার হয়েছে। হিন্দুদের ১৫টি প্রতিমা ভাঙচুরের পাশাপাশি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ১টি মন্দিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।