শাযরেহ হকের দায়ের করা চার মামলায় ট্রান্সকমের তিন শীর্ষ কর্মকর্তার জামিন
হত্যাসহ প্রতারণার পৃথক ৪ মামলায় আদালতে আত্মসমপর্ণ করে ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহনাজ রহমান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমান ও হেড অব ট্রান্সফরমেশন যারেফ আয়াত হোসেন জামিন পেয়েছেন। তাঁর বোন এবং ট্রান্সকম গ্রপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের ছোট মেয়ে শাযরেহ হক এসব মামলা করেছেন।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের বিচারক মাহবুব আহমেদ আজ বুধবার (৩ এপ্রিল) এই আদেশ দেন।
গুলশান থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা এবং উপ-পরিদর্শক শাহ আলম জামিন আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আপিল বিভাগের নির্দেশনার পরে অভিযুক্তরা আজ সকালে আদালতে আত্মসমপর্ণ করেন। শুনানির পরে আদালত চারটি মামলায় তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন। প্রত্যেকের পাঁচ হাজার টাকার বন্ড জমার শর্তে– তাঁদের জামিন মঞ্জুর করা হয়।
ট্রান্সকম গ্রুপের এই কর্মকর্তাদের একজন আইনজীবী শাহিনুর ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, 'বিদেশ অবস্থানরত ট্রান্সকম গ্রুপের শীর্ষ এই তিন কর্মকর্তা দেশে ফেরার পর বুধবার সকালে আদালতে আত্মসমপর্ণ করেন। এরপর তারা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আদালতে জামিন আবেদন করেন। পরে শুনানি নিয়ে আদালত চারটি মামলায় জামিন মঞ্জুর করেন।'
গত ২২ মার্চ এই ট্রান্সকমের এই তিন কর্মকর্তাকে নির্বিঘ্নে দেশে ফেরত আসার সুযোগ দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন আপিল বিভাগ। দেশে ফেরার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদেরকে আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসাথে তাদেরকে দেশে ফেরতের সময় গ্রেপ্তার, আটক বা হয়রানি না করার আদেশ দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের আগের একটি নির্দেশনাকে চ্যালেঞ্জ করে শাযরেহ হকের এক পিটিশনের শুনানি নিয়ে এই নির্দেশনা দেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম
গত ২২ ফেব্রুয়ারি শাযরেহ হক গুলশান থানায় অর্থ আত্মসাৎ, সম্পত্তি দখল, অবৈধভাবে কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরের অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন। ট্রান্সকম গ্রুপের আট কর্মকর্তার এসব মামলা করা হয়।
প্রয়াত লতিফুর রহমানের ছোট মেয়ে শাযরেহ হক ট্রান্সকম গ্রুপের আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঢাকার গুলশান থানায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি তিনটি মামলা করেন। ওই মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁরা আদালত থেকে জামিন পান।
এজাহারে বাদী বলেছেন, তাঁদের বাবা লতিফুর রহমানের অবর্তমানে সিমিন ও তাঁর সহযোগীরা কাগজপত্র জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করেন।
মামলার নথিতে শাযরেহ বলেছেন, তার বাবা বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ও এফডিআরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা রেখে মারা যান। ওই অর্থের নমিনি ছিলেন তার মা শাহনাজ রহমান।
২০২০ সালের ১ জুলাই লতিফুর রহমান মারা যাওয়ার পর ওই টাকা তাঁর উত্তরাধিকারীদের (ওয়ারিশ) মধ্যে বণ্টন করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর তার বড় বোন (সিমিন) সব টাকা নিজের ও তাঁর মায়ের অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলেন বলে মামলার এজাহারে দাবি করেছেন শাযরেহ।
অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে এসব তহবিল সরানোয় সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়া গত ২২ মার্চ শাযরেহ হক তার বড় বোন সিমিন রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, সিমিন রহমানসহ বাকি আসামিরা তার বড় ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে বিষ প্রয়োগ/শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন। আরশাদ ওয়ালিউর রহমান গত বছরের ১৬ জুন রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান।