এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিককে ফিরিয়ে আনতে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে: কেএসআরএম
সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ। মুক্তিপণের অর্থ দিয়ে ঈদের পরপরই তাদের মুক্ত করে দেশে নিয়ে আসা হবে।
কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টিবিএসকে বলেন, "জিম্মি নাবিকদের মুক্ত করতে সোমালিয়ান জলদস্যুদের সাথে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। মুক্তি প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক আলোচনার বেশ অগ্রগতিও হয়েছে। আমরা ঈদের পরেই এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিকদের মুক্ত করে নিয়ে আসতে পারবো। নাবিকদের মুক্ত করার পর ওই জাহাজ পরিচালনার জন্য ২৩ জন নাবিক প্রস্তুত রয়েছে।"
এর আগে, গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুরা বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নেয়। মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় জাহাজটিতে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, "জিম্মি নাবিকদের মুক্তির বিষয়ে জাহাজ মালিক এবং জলদস্যুদের মধ্যে নেগোসিয়েশন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। কত টাকায় নেগোসিয়েশন হবে সেটি প্রকাশ করার কোনো সুযোগ নেই।"
"নাবিকরা ভালো আছেন। তারা জাহাজে নরমাল রুটিন ওয়ার্ক করছেন। তাদের সঙ্গে জলদস্যুদের সম্পর্কও ভালো। নাবিকরা তাদের নিজ নিজ কেবিনেই থাকছেন। রেশনিং করে পানির সংকট মোকাবেলা করা হচ্ছে। খাওয়ার ও তেমন সংকট নেই। এখন পর্যন্ত আতঙ্কিত হওয়ার মত কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি," যোগ করেন তিনি।
জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, নেগোসিয়েশন চূড়ান্ত হলে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে নাবিকদের দেশে ফেরত আসতে এক সপ্তাহ থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগে যেতে পারে।
যে প্রক্রিয়ায় মিলবে মুক্তি
কেএসআরএম গ্রুপ এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, কোনো জাহাজ এবং নাবিক জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হলে বীমা প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে জাহাজ মালিক এবং দস্যুদের সাথে সমঝোতা প্রক্রিয়া শুরু হয়।
মুক্তিপণের অর্থ পরিশোধ করতে হয় ১০ বছরের পুরোনো নয় এমন ক্যাশ ডলারে। ডলার পরিশোধ করা হয় ওয়াটার প্রুফ প্যাকেটে সমুদ্রে নিক্ষেপের মাধ্যমে।
হেলিকপ্টার থেকে জিম্মি জাহাজের আশপাশে সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হয় মুক্তিপণের অর্থ। এরপর জলদস্যুরা সেগুলো গণনার পর তাদের চাহিদার সমপরিমাণ অর্থ হলে, জিম্মি নাবিকদের মুক্তি দেয়। সাধারণত আটক অঞ্চলের আশেপাশের কোনো বন্দরে পৌঁছে দেওয়া হয় জাহাজ।
সেই হিসেবে কাছাকাছি বন্দর হিসেবে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি ওমানের বন্দরে পৌঁছে দেওয়া হতে পার। সেখানে নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে আকাশ পথে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছে জাহাজের মালিক কেএসআরএম গ্রুপ।
এমভি আবদুল্লাহই জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া প্রথম বাংলাদেশি জাহাজ নয়। এর আগে, ২০১০ সালে একই কোম্পানির এমভি জাহান মণি নামে একটি জাহাজ সোমালি জলদস্যুদের হাতে আটক হয়েছিল। সে সময় ক্যাপ্টেনের স্ত্রী ও ২৫ জন ক্রুসহ জাহাজে মোট ২৬ জন লোক ছিলেন। মুক্তিপণ দিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে সময় লেগেছিল ১০০ দিন।
তথ্যের ঘাটতি
জিম্মি নাবিক মোশারফ হোসেন শাকিলের বড় ভাই আবু বকর শাকিল বলেন, "আমাদের প্রত্যাশা ছিল, ঈদের আগে ভাইয়ের মুক্তি মিলবে। আমার বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা তার অপেক্ষায় রয়েছে। যত বিলম্ব হচ্ছে আমাদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে।"
জিম্মি নাবিক আইনুল হক অভির ছোট ভাই মাইনুল হক টিবিএসকে বলেন, "আমার ভাই কখন মুক্তি পাবে, আমরা এ বিষয়ে কোনো ধরনের তথ্য পাচ্ছি না। মাঝে মাঝে ভাইয়ের সাথে কথা হলেও সেখানকার পরিস্থিতি অবর্ণনীয়। আমরা ভীষণ চিন্তায় আছি। জাহাজ মালিক এবং সংশ্লিষ্টদের কাছে আমাদের পরিবারের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন আমার ভাইসহ অন্য নাবিকদের জিম্মিদশা থেকে ফিরিয়ে আনা হয়।"