তাপপ্রবাহের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া অফিস
দেশের ৪ অঞ্চলে নতুন করে ৪৮ ঘণ্টার তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি)। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে কার্যকর হয়েছে এই সতর্কবার্তা।
দেশের পূর্বাঞ্চলে তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে রোববার পর্যন্ত তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে পূর্বাভাসে। এমনকি, কিছু স্থানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
তাপপ্রবাহের পরে, আগামী ২২ বা ২৩ মে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। পরবর্তীতে এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
বিএমডি আবহাওয়াবিদ মোঃ ওমর ফারুক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "দেশে চলমান তাপপ্রবাহ আগামী ২ দিন পরেই অধিকাংশ এলাকায় কম আসবে এবং বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের পূর্বাঞ্চলে আজ শনিবার থেকেই তাপমাত্রা কমে আসবে। তবে খুলনা, রাজশাহী বিভাগের তাপপ্রবাহ রোববার পর্যন্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এরমধ্যে এই দুটি বিভাগের ২/১ টি স্টেশনের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।"
তিনি আরও জানান, আগামী ২২ বা ২৩ মে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে।
এদিকে রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা ও খুলনা বিভাগে আগের তাপপ্রবাহের সতর্কতাই কার্যকর রয়েছে। বাতাসের অধিক আর্দ্রতা অস্বস্তির কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি বা বজ্র ও ঝড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের অন্যত্র, আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া, খুলনায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মোংলায় ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সৈয়দপুরে ৩৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রংপুরে ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, পাবনায় সেলসিয়াস ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ঢাকায় ৩৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যার বুলেটিনে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি এবং বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের কয়েকটি স্থানেও অনুরূপ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশসহ প্রধানত শুষ্ক আবহাওয়া থাকতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী ২২ বা ২৩ মে বঙ্গোপসাগরে সম্ভাব্য নিম্নচাপটি ২২ মে-তেই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। তীব্রতা বাড়লে ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে 'রেমাল'; আরবি ভাষায় শব্দটির অর্থ 'বালি'।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, "২২-২৩ মে'র দিকে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেটি কোনদিক দিয়ে যাবে সেটি এখনও বলা যাচ্ছে না। ২০ মে এর পরে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ স্পষ্ট হতে পারে।"
এদিকে, ভারতের আবহাওয়া দপ্তর চলতি মে মাসে বঙ্গোপসাগরে দুটি নিম্নচাপ তৈরির পূর্বাভাস দিয়েছে। এরমধ্যে আগামী ২২ মে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে এবং এই সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় আগামী ২৫ মে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলে পৌঁছাতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশও টিবিএসকে জানান, আগামী ২২ মের পর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তথ্য বিশ্লেষণের পর তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি ও শক্তিশালী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় চারটি প্রধান উপাদানের মধ্যে ইতোমধ্যে তিনটির উপস্থিতি রয়েছে মধ্য ও দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে।
"আগামী ২৫ থেকে ২৭ মে এর মধ্যে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল থেকে শুরু করে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উপকূলের মধ্যবর্তী এলাকার ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে," বলেন তিনি।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই ঘূর্ণিঝড়ের জেরে আগামী ২৪ মে রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হতে পারে উপকূলীয় এলাকায়। বৃষ্টি চলতে পারে ২৭ মে পর্যন্ত।
অনুমান করা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশের মধ্যে এটি কোথাও আছড়ে পড়তে পারে।