ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে আজ থেকেই উপকূলীয় অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত হতে পারে
পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর কেন্দ্রের বাতাসের গতিবেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি আজ শনিবার (২৫ মে) ঘূর্ণিঝড় 'রেমাল'-এ পরিণত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে শনিবার রাত থেকেই বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রেমালের প্রভাবে শনিবার রাতে উপকূলীয় ও অন্যান্য এলাকায় বৃষ্টি হবে, তারপর রোববার বাংলাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে তাপমাত্রা কমবে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রোববার বিকেল থেকে সোমবার সন্ধ্যার মধ্যে রেমাল উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করতে পারে। দুই দেশের প্রকাশিত ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি কলকাতা ও খুলনার মাঝখান দিয়ে যেতে পারে।
এ ঘূর্ণিঝড়টি 'প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে' পরিণত হতে পারে বলে ধারণা করছে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ও আবহাওয়াবিদরা।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ টিবিএসকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের বাম দিকের সামান্য অংশ পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ও মেদিনীপুর জেলা এবং বেশিরভাগ অংশ বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর উপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করার আশঙ্কা বেশি।
তিনি বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় রেমাল ২৬ মে (রোববার) সকাল ৬টার পর থেকে ২৭ মে দুপুর ১২টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর প্রভাবে বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলার ওপরে ৩০০ থেকে ৬০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে শনিবার থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে।'
এই আবহাওয়াবিদ জানান, সর্বোচ্চ পরিমাণে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল, ভোলা, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, মাগুরা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, যশোর, ঝিনাইদহ জেলায়।
মোস্তফা কামাল পাশা আরও বলেন, 'ঘূর্ণিঝড়টি যদি জোয়ারের সময় উপকূলে আঘাত হানা শুরু করে তবে উপকূলীয় এলাকাগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট বেশি, আর ভাটার সময় উপকূলে আঘাত হানা শুরু করলে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৬ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হতে পারে।'
এছাড়া ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাতের সময় খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোর ওপরে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার যা দমকা হাওয়াসহ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানান তিনি।অর্থাৎ ঘূর্ণিঝড় রেমাল প্রবল থেকে অতি-প্রবল ঘূর্ণিঝড় হতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের (বিএমডি) তথ্যানুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ ৮৯-১১৭ কিলোমিটার হলে তাকে প্রবল ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হয়, তখন সেটিকে 'অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়' বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তা হয় 'সুপারসাইক্লোন'।
এরইমধ্যে চট্টগ্রাম, মোংলা, কক্সবাজার ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দিয়েছে বিএমডি। সেইসঙ্গে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।