পরীমনির সঙ্গে ‘অনৈতিক’ সম্পর্ক, এডিসি সাকলায়েনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সুপারিশ
নায়িকা পরীমনির সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত 'অনৈতিক' সম্পর্ক স্থাপন ও নিজের সরকারি বাসভবনে নিজ স্ত্রীর অবর্তমানে সময় কাটানোর মতো অভিযোগে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন গুলশান গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক এডিসি গোলাম সাকলায়েনকে। তিনি বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলার ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করছেন।
গত ১৩ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা-২ শাখা থেকে উপসচিব রোকেয়া পারভিন জুঁই স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে তাকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করার জন্য আবেদন করা হয়েছিল।
শৃঙ্খলা শাখার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাকলায়েন ধারাবাহিকভাবে নায়িকা পরীমনির সময় কাটানো শুরু করেন। বিভিন্ন সময়ে (দিনে ও রাতে) নায়িকা পরীমনির বাসায় সাকলায়েন অবস্থান করেছেন বলে মোবাইলের ফরেনসিক রিপোর্ট দেখে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, '১ আগস্ট, ২০২১ তারিখ ভোর ৬টা থেকে ২ আগস্ট, ২০২১ তারিখ রাত ৩টা পর্যন্ত রাজারবাগ মধুমতি পুলিশ অফিসার্স কোয়ার্টার্সে নায়িকা পরীমনির যাতায়াতের ধারণকৃত সিসিটিভি ফুটেজের ফরেনসিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণেও প্রমাণ পাওয়া যায়।'
এই ঘটনা বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে আসার পর সরকার ও পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন ও অন্যান্য তথ্য পর্যালোচনা করে সাকলায়েনকে দোষী সাব্যস্ত করে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী বিধি মোতাবেক গুরুদণ্ডের আওতায় কেন তাকে 'চাকরি হতে বরখাস্তকরণ' করা হবে না সে মর্মে ২য় কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়।
দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে চাকরি থেকে বরখাস্তকরণ মামলার দায় থেকে অব্যাহতি প্রার্থনা করেন সাকলায়েন।
সাকলায়েনের বিভাগীয় মামলার তদন্ত প্রতিবেদন, সাক্ষীদের জবানবন্দি, অভিযুক্তের আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক লিখিত জবাব, মৌখিক বক্তব্য ও অন্যান্য কাগজপত্রা পুনরায় বিস্তারিত পর্যালোচনা করে ২য় কারণ দর্শানোর জবাব সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী 'অসদাচরণ' এর অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনক বিধি ৪ এর উপবিধি ৩(খ) বিধি মোতাবেক 'গুরুদণ্ড' হিসেবে চাকরি হতে 'বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান' এর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ২০২১ সালের ১৪ জুন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন পরীমনি। এর পরদিনই উত্তরার একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদকে। পরে এই ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ পরীমণিকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
সেই মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ছিলেন গোলাম সাকলায়েন। তখন থেকেই সাকলায়েনের সঙ্গে পরিচয় হয় পরীমনির। এরপর থেকেই শুরু হয় যোগাযোগ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হয়েও পরীমনির সঙ্গে 'ঘনিষ্ঠতা'র অভিযোগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল গোলাম মোহাম্মদ সাকলায়েনকে।