ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতি শুরু
'প্রত্যয়' সার্বজনীন পেনশন প্রকল্প প্রত্যাহারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আজ (১ জুলাই) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছেন।
আজ সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়য়ে কোনো ক্লাস বা পরীক্ষা হয়নি।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ডক্টর আখতারুল ইসলাম বলেন, 'নতুন পেনশন স্কিমের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সরকার এই স্কিম প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তা চলবে।'
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগ পরিদর্শন করে দেখা গেছে, শিক্ষকদের সম্পৃক্ততা নেই এমন প্রশাসনিক কার্যক্রম বিভাগটিতে চলমান আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভবনটি অবশ্য বন্ধ ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের ছাত্রী ফারিহা বলেন, 'কিছু প্রশাসনিক অফিস খোলা আছে। কিন্তু সব ক্লাসরুম তালাবদ্ধ।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (ডিইউটিএ) সাধারণ সম্পাদক নিজাম হক ভূঁইয়া জানান, শিক্ষকদের দাবি নিয়ে তারা দুই দিনব্যাপী কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'আমাদের কর্মসূচি আজ দুপুর ১২টায় কলা অনুষদের সামনে শুরু হবে এবং চলবে দুপুর ১টা পর্যন্ত।'
এদিক আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে টিএসসিতে হালকা বৃষ্টির মধ্যেও শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।
সকাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) শিক্ষক সমিতির ডাকা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দুটি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর বেণু কুমাী দে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'শিক্ষকদের ক্লাস চালিয়ে যেতে আমরা অনুরোধ করেছিলাম। তবে তারা অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।'
এদিকে শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সব পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রোববার চুয়েটের রেজিস্ট্রার শেখ মুহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সই করা এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
আদেশে বলা হয়, চুয়েটের বিভিন্ন বিভাগের চলমান স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সব পরীক্ষা কার্যক্রম অনিবার্যকারণ বশত স্থগিত করা হলো। স্থগিত পরীক্ষাগুলোর পরবর্তী তারিখ স্ব স্ব বিভাগ থেকে পরে ঘোষণা করা হবে।
এ বছরের ১৩ মার্চ সরকার স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা ও তাদের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রত্যয় স্কিম যুক্ত করে জানিয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে যারা যোগদান করবেন, তারা সবাই বাধ্যতামূলকভাবে এই স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হবেন। তবে ২০২৪ সালের ১ জুলাইয়ের আগে এসব প্রতিষ্ঠানে যারা যোগদান করেছেন, তারা আগের মতোই পেনশন সুবিধা পাবেন।
নতুন বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদেরও সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় আনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে যারা সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পাবেন, তারাও বাধ্যতামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। তাদের জন্য যে স্কিম চালু করা হবে, তার নাম 'সেবক'। নতুন এই স্কিমে কোন ধরনের সুবিধা থাকবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এবং অন্যান্য সংবিধিবদ্ধ সংস্থাগুলোতে কর্মরত কর্মচারীরা তাদের অধীনস্থদের সাথেও পেনশন প্রকল্পের আওতায় পড়বে যা আজ থেকে কার্যকর হতে চলেছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রত্যয় স্কিমে তাদের অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন। প্রকল্প প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
এদিকে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ (সোমবার) থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত।