মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের স্বচ্ছ তদন্তে বাংলাদেশকে সহায়তায় প্রস্তুত জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব অভিযোগের বিষয়ে একটি পক্ষপাতহীন, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত পরিচালনায় বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করতে তার কার্যালয় প্রস্তুত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) এক বিবৃতিতে তিনি এ সহায়তার আশ্বাস দেন।
বিবৃতিতে তুর্ক বলেন, 'এ ধরনের ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নিশ্চয়তা দিতে হবে। পাশাপাশি বিক্ষোভে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রতিশোধ নেওয়া হবে না- এমন নিশ্চয়তা দিতে হবে।'
'ভবিষ্যতেও কোনো প্রতিশোধ নেওয়া থেকে বিরত থাকা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার রক্ষার জন্য দেশের নিরাপত্তা খাতের দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপক সংস্কারও গুরুত্বপূর্ণ।'
তিনি বলেন, 'আমি আশা করছি, সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা ব্যবস্থাকে উল্লেখযোগ্য হারে কমানো হবে। এর ফলে (দেশের জনগণের মাঝে সরকারের প্রতি) আস্থার জায়গা ফের উন্মুক্ত হতে পারে, যা দেশটির অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে অর্থবহ এবং যা অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপের দিকে পরিচালিত করবে।'
সহিংসতায় উসকানি দেয় বা ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর দমনপীড়ন শুরু হয়- এ ধরনের সমস্ত কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখতে দেশের রাজনৈতিক কলাকুশলীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, 'সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যেসব কারণে দেশ সহিংসতার দিকে ধাবিত হয়েছিল, সেসব অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিয়ে সাধারণ জনগণের সঙ্গে সংলাপের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'
তিনি আরও বলেন, 'ক্রমবর্ধমান সহিংসতার প্রেক্ষাপটে গত সপ্তাহের বিক্ষোভ দমনে দমনপীড়নের বিষয়ে আমি জরুরি ভিত্তিতে পূর্ণ বিবরণী প্রকাশ করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।'
তিনি দাবি করেন, সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, সরকারি নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র ও যুবসমাজের আন্দোলনের কারণে বাংলাদেশে ১৭০ জনের বেশি নিহত এবং এক হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন; অনেকে নিখোঁজও রয়েছেন।
তিনি জানান, সহিংসতায় অন্তত দুজন সাংবাদিক নিহত ও বহু মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া গ্রেপ্তার করা হয়েছে শত শত মানুষকে, যাদের মধ্যে বিরোধী দলের নেতারাও রয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান বলেন, 'নিহত, আহত বা আটকদের পরিবারের সুবিধায় সরকারের এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করা জরুরি।'
তিনি বলেন, 'দেরি না করে সরকারকে পূর্ণ ইন্টারনেট পরিষেবা পুনরুদ্ধার করতে হবে, যাতে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমসহ সকল মানুষ অবাধে ও আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যোগাযোগ করতে পারে।'
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।'