জমে যাওয়া কার্যাদেশ মেটাতে ও ক্ষতি কমাতে শুক্রবারও পূর্ণ সক্ষমতায় কাজ করছে পোশাক কারখানা
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী অস্থিরতায় পাঁচদিন বন্ধ থাকার কারণে জমে যাওয়া কার্যাদেশ পূরণ ও উৎপাদন-ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে দেশের কিছু তৈরি পোশাক কারখানা শুক্রবার (২৬ জুলাই) পূর্ণ-সক্ষমতায় কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
এএল মুসলিম গ্রুপ, শারমিন গ্রুপ, স্প্যারো গ্রুপ এবং উইন্ডি অ্যাপারেলসের মতো তৈরি পোশাকের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সকাল থেকে তাদের উৎপাদন পুরো সক্ষমতায় বজায় রেখেছে বলে কর্মকর্তারা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন।
বায়িং হাউস এবং আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের লিয়াজোঁ অফিসগুলোও জমে যাওয়া কার্যাদেশ মেটাতে শুক্রবারে কাজ করছে বলে জানা গেছে।
ইন্টারনেট সেবা ব্যাহতের কারণে ক্রেতাদের আস্থা নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় রপ্তানিকারকেরা আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে কার্যাদেশ ২০ শতাংশ কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন।
উইন্ডি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেসবাহ উদ্দিন খান টিবিএসকে বলেন, তারা স্টাইলভেদে দৈনিক দেড় থেকে দুই লাখ উভেন পোশাক তৈরি করেন।
উৎপাদনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা দৈনিক ১০–১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত তাদের উৎপাদন চালাচ্ছেন। কারখানা বন্ধ হওয়ার আগে তারা দিনে ৮–১০ ঘণ্টা পর্যন্ত উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ব্যবসার মৌসুমের মাঝেই ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছে দিতে শুক্রবারও তারা পূর্ণ-সক্ষমতায় সেলাইয়ের কাজ চালিয়ে যাবেন।
বিজিএমইএ-এর একজন পরিচালক হিসেবেও দায়িত্বরত মেসবাহ উদ্দিন খান বলেন, 'জমে যাওয়া কাজ শেষ করতে আমাদের আরও তিন থেকে চার সপ্তাহ এমন ব্যস্ত শিডিউল চালিয়ে যেতে হবে।'
উইন্ডি গ্রুপ একটি ওয়াশিং প্ল্যান্টসহ ৯টি উৎপাদন ইউনিট থেকে বছরে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। এ প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ১৫ হাজার লোকের লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে বলে জানান তিনি।
স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, তাদের একটি মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আকাশপথে পণ্য পাঠাতে বলছে।
'তারা এর খরচ দিয়ে দেবে। কিন্তু তার বদলে তারা পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ ছাড় চেয়েছে,' বলেন তিনি।
শোভন আরও বলেন, এ ক্রেতার বিভিন্ন ধরনের উভেন পোশাকের ১.৮০ লাখ পিসের অর্ডার রয়েছে। এসব পণ্যের চালান পাঠানোর শেষ সময় ২৯ জুলাই।
'আমরা এ সময়ের মধ্যে ৮৫ হাজার পিস পর্যন্ত উৎপাদন করতে পারব,' তিনি বলেন। তারা আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর অনুরোধ করলেও ক্রেতাপক্ষ তা মানছে না বলেও জানান তিনি।
তবে এক লাখ পিস পোশাকের কার্যাদেশ দেওয়া আরেকটি মার্কিন শীর্ষস্থানীয় ক্রেতা তাদের সমস্ত পণ্য পাঠানোর সময়সীমা এক সপ্তাহের জন্য বাড়িয়েছে।
'আমাদের প্রতিষ্ঠানের ১৫ হাজার ৪০০ কর্মী ক্রেতাদের লিড টাইম [ক্রয় আদেশের পর থেকে ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছানো পর্যন্ত সময়] মেটাতে ৫টি কারখানায় ওভারটাইম কাজ করছেন,' জানান শোভন।
তিনি উল্লেখ করেন, ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত কর্মীদের সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে দেয় না।
বিজিএমইএ-এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শোভন ইসলাম বলেন, গত বছর, গ্রুপটি ২৭৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য উৎপাদন করেছিল। এ বছর এটি ৩০০ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রার পরিকল্পনা করেছে।
এর আগে পাঁচদিন সম্পূর্ণ বন্ধ থাকা ও উৎপাদন ক্ষতির মুখে পড়ার পর মঙ্গলবার থেকে পোশাক কারখানাগুলো কার্যক্রম শুরু করে।
পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রায় এক হাজার কারখানা ওইদিন তাদের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেছিল।
সোমবার বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতাদের একটি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে তার বাসভবনে দেখা করে কারখানাগুলোর নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে বিজিএমইএ সভাপতি এসএম মান্নান কচি বলেন, বৈঠকে নিরাপত্তা ইস্যুই ছিল আলোচনার প্রধান বিষয়।
'বুধবার থেকে সমস্ত পোশাক কারখানা আবার চালু হবে। মন্ত্রী কারফিউয়ের মাঝে নিরাপদ পরিবেশের আশ্বাস দিয়েছেন। শ্রমিকদের আইডি কার্ডগুলোকে কারফিউ পাস হিসাবে বিবেচনা করা হবে,' তিনি জানান।