আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের কারণে আজও বন্ধ ৬৫ কারখানা
ঢাকার আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে আজও ৬৫ টি পোশাক কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে শিল্পের অভ্যন্তরীণ সূত্র।
সূত্রটি জানায়, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে আজ শিল্পাঞ্চলের মোট ৬৫টি পোশাক কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এর মধ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩(১) ধারায় নো ওয়ার্ক, নো পে'র ভিত্তিতে ১৪টি এবং কারখানা স্ব-বেতনে ছুটি আছে, কাজ বন্ধ আছে কিংবা শ্রমিকরা চলে গেছে এমন কারখানার সংখ্যা ৫১টি।
এর আগে সকালে শিল্প পুলিশ জানায়, সকাল থেকে শিল্পাঞ্চলের বাইপাইল, ডিইপিজেড, জামগড়া, নরসিংহপুরসহ অন্যান্য এলাকাগুলোতে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক থাকলেও জিরাবো পুকুরপাড় এলাকার লুসাকা গ্রুপের বেক নিট লিমিটেডের শ্রমিক বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়াসহ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের জন্য কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে ধীরে ধীরে পরিস্থিতির অবনতি হয়।
এসময় কারখানাটির শ্রমিকরা আশেপাশের অন্যান্য কারখানাগুলোর সামনে গিয়েও হৈ চৈ শুরু করে। পরবর্তীতে ১৩(১) ধারায় বন্ধ থাকা মন্ডল নিটওয়্যার লিমিটেড এর শ্রমিকরাও সড়কে নেমে এসে বিভিন্ন দাবি ও অভিযোগ তুলে আন্দোলন শুরু করে।
এক পর্যায়ে মন্ডল নিটওয়্যার এর শ্রমিকরা জিরবোসহ আশেপাশের অন্যান্য কারখানাগুলোর সামনে গিয়ে ইট পাটকেল নিক্ষেপ, হৈ চৈ শুরু করলে জিরাবো পুকুরপাড়, কাঠগড়া এলাকায় অবস্থিত অন্তত ২০/২৫টি কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের কারখানা ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
মন্ডল গ্রুপের একাধিক শ্রমিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে বলেন, তারা শেষ কয়েকদিন যাবত ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধিসহ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও তা না করে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে। এছাড়াও কারখানাটির ভবন মালিক রাজিব ও তার ভাই সজিব আন্দোলনরত শ্রমিকদের ধরে নিয়ে মারধর করে।
এসময় শ্রমিকরা জানান, মূলত তাদের কাছে তথ্য রয়েছে ভবন মালিক রাজিব তাদের দুই শ্রমিককে আটকে রেখেছে। একারনে তারা আন্দোলন করছে।
লুসাকা গ্রুপের একজন শ্রমিক বলেন, সকালে আমি কারখানার সামনে গিয়েছিলাম। পরে শ্রমিকরা বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে এবং শ্রমিকদের নামে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার চেয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ধাওয়া দিয়ে শ্রমিক দের সড়িয়ে দেয়। পরে মন্ডলের শ্রমিকরাও আন্দোলন শুরু করে এবং আশেপাশের কারখানা গুলোতে গিয়ে শ্রমিকদের বের করে নিয়ে আসে।
ইন্ডাস্ট্রি সূত্র জানায়, আজ আশুলিয়ায় শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় দ্য রোজ ড্রেসেস লিমিটেড, ইসলাম ড্রেসেস লিমিটেড, আঞ্জুমান ডিজাইন লিমিটেড, এনভয় ফ্যাশন লিমিটেড, নিউএইজ গ্রুপ, বেক নীটসহ মোট ১৪টি কারখানা বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া কারখানা স্ব-বেতনে ছুটি আছে বা কাজ বন্ধ আছে কিংবা শ্রমিকরা চলে গেছে এমন কারখানার মধ্যে রয়েছে, স্কাইলাইন গার্মেন্টস লিমিটেড, স্কাইলাইন অ্যাপারেলস লিমিটেড, উছো ফ্যাশন, ম্যাংগোটেক্স লিমিটেড, অরুনিমা অ্যাপারেলস, টেক্সটাউন লিমিটেড, এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেড, কাঠগড়া কম্পোজিট লিমিটেড, সাউদার্ন ক্লথিং, ম্যাসকট নিট, আগামী অ্যাপারেলস, কম্ফিট কম্পোজিট।
সূত্রটি জানায়, আজ সাভার, আশুলিয়া ও জিরানি এলাকায় মোট চালু কারখানার সংখ্যা ৪০৭টি, বিপরীতে বন্ধ রয়েছে ৬৫টি, গাজীপুরে ৮৭৬ টি কারখানা চালু রয়েছে, বিপরীতে বন্ধ রয়েছে একটি কারখানা।
এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় চালু রয়েছে ২০৯ টি কারখানা, ডিএমপি এলাকায় ৩০২টি, চট্টগ্রামে ৩৫০ টি। এসব এলাকায় কোন কারখানা আজ বন্ধ নেই।
এদিকে শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক অসন্তোষ সম্পর্কে জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কল রিসিভ না করায় শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।