মেয়েকে দেওয়া কথা রাখতে পারেননি মিঠু, মারা গেলেন পুলিশের গুলিতে
মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় নামাজ শেষ করেই বাড়ি ফিরবেন বলে মেয়েকে কথা দিয়েছিলেন বাবা মুহাম্মাদ শরীফ মিঠু। মেয়েকে বলেছিলেন বাড়ি এসে একসঙ্গে খাবার খাবেন। কিন্তু তা আর হলো না। মেয়ের সঙ্গে কথা বলার পর মুহূর্তেই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি।
বাবার মৃত্যুতে অসহায় মেয়ে মাহাবী শরীফ জারা। এছাড়া একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে এখনও চোখের পানি ফেলেন মিঠুর বৃদ্ধা মা।
ফরিদপুর শহরের মোল্লাবাড়ি সড়কের মৃত শরীফ শামসুল আলমের একমাত্র ছেলে মিঠু। গত ১৯ জুলাই বুকে গুলি লেগে মারা যান তিনি।
২০০৬ সালে নওগাঁর রোহেদুন সেজবা ইভার সাথে বিয়ে হয় মিঠুর। একমাত্র মেয়ে জারাই যেন ছিল তার বাবার পৃথিবী। মেয়েকে ঘিরেই ছিল তার সব স্বপ্ন।
সংসারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে ২০১৫ সালে ঢাকার বনশ্রীতে বুটিকের একটি দোকান দেন মিঠু। তার স্ত্রী একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করতেন। তিনিও চাকরি ছেড়ে দোকানটির দেখাশোনা শুরু করেন। দুজনের আয়ে ভালোই চলছিল তাদের সংসার।
গত ১৯ জুলাই দুপুরে বাসা থেকে বের হয়ে বনশ্রী মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন মিঠু। তার বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ায় জারা তাকে ফোন করে। মিঠু তার মেয়েকে ফোনে বলেছিলেন যে তিনি তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরবেন। তবে তিনি সে কথা রাখতে পারেননি।
কিছুক্ষণ পরে মিঠুর পরিবার জানতে পারে যে মিঠু আন্দোলনের সময় নিহত হয়েছেন। পরে স্বজনরা অনেক খোঁজাখুঁজির পর হাসপাতালে তার মরদেহ উদ্ধার করেন। মিঠুকে তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে দাফন করা হয়।
স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে ছয় বছরের মেয়ে জারাকে নিয়ে নওগাঁয় নিজ বাড়িতে আছেন ইভা।
মিঠুর স্ত্রী ইভা বলেন, আমার বাবার বাড়ি নওগাঁ। আমার মেয়ে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখায় ইংরেজি ভার্সনে ২য় শ্রেণিতে পরে। আমি একটা বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করতাম। শারীরিক অসুস্থতার জন্য ২০২১ সালের ডিসেম্বর চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। সুস্থ হওয়ার পর মেয়ের জন্য আর চাকরি করতে দেয়নি ওর বাবা। আমাকে বলেছিল অনেক কষ্ট করেছো। এখন মেয়েকে সময় দাও। মেয়েকে মানুষ করতে হবে।
তিনি বলেন, সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে আমার মেয়ের যেটা অধিকার সেটা যেন নিশ্চিত করে।
মিঠুর মা হানুফা আলম বলেন, মিঠু ছিল আমার একমাত্র সন্তান। ওর মৃত্যুর পর আমার জীবন এখন অন্ধকারে ভরে গেছে। জানি না সামনের দিন আমার কীভাবে কাটবে?'
তিনি তার পরিবারের জন্য সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন।