চট্টগ্রামে কলেজ শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনা, নওফেলসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যামামলা
চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে একজন শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় হত্যামামলা দায়ের করা হয়েছে। তানভীর ছিদ্দিকী নামের ওই শিক্ষার্থী ছিলেন আশেকান আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
তিনি কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার কালামারছড়া নয়াপাড়ার নুর আহম্মেদ বাড়ির বাদশা মিয়ার ছেলে।
মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে করা হত্যামামলায় শেখ হাসিনা ও মহিবুল হাসান নওফেল ছাড়াও – চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তিনজন কাউন্সিলরসহ ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে।
উল্লেখযোগ্য অন্যান্য আসামিরা হলেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা বাবর আলী (৫৫), চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী (৫০), চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি (৩৫), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. এসরারুল হক (৪৫), জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন (৫০) ও চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনু (৪২)।
গতকাল শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাতে নিহত তানভীর ছিদ্দিকীর চাচা মো. পারভেজ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন বলে জানিয়েছেন চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির।
গত ১৮ আগস্ট নগরের চান্দঁগাও থানায় বহদ্দারহাট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন তানভীর। তার সহপাঠী ও বন্ধুরা সেসময় অভিযোগ করেছিলেন, আওয়ামী-যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাকে হত্যা করেছে।
চান্দগাঁও থানার ভার্রপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির টিবিএসকে বলেন, 'চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এইচএসসি পরীক্ষার্থী তানভীর ছিদ্দিকী নিহতের ঘটনায় এই হত্যামামলাটি করা হয়েছে। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেলসহ ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।'
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৭ জুলাই আশেকান আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তানভীর ছিদ্দিকী দুপুরে অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমগ্র বাংলাদেশ 'শাট-ডাউন' কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করে– পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুর এলাকা থেকে মিছিলযোগে নগরের চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের সামনে রাস্তার ওপর শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করেন।
একইদিন বিকেলে ৪টা ২০ মিনিটের দিকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সাবেক প্রধানমনমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলের নির্দেশে ও হুকুমে মামলার ৩ থেকে ৩৪ নম্বর আসামিরাসহ– অজ্ঞাতনামা ৪০ থেকে ৫০ জন আসামি তাদের হাতে থাকা ধারালো চাপাতি, কিরিচসহ মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বহদ্দারহাট ওয়াপদা অফিসের দিক থেকে এসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী তানভীর ছিদ্দিকীসহ অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে ইট-পাথর নিক্ষেপসহ এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে।
এতে তানভীর ছিদ্দিকী গুলিবিদ্ধ হয়, এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীসহ অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। গুরুতর জখম অবস্থায় তানভীর ছিদ্দিকীকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে– কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।
একই ঘটনায় একই সময়ে একই স্থানে গুলিবিদ্ধ হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হৃদয় চন্দ্র তরুয়া (২৩)। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার, এবং বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের মুদি দোকানের কর্মচারী পথচারী সাইমন প্রকাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।