শেখ হাসিনার করা ‘অন্যায় চুক্তিগুলো’ জনসম্মুখে প্রকাশ করুন: রিজভী
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিভিন্ন দেশের সাথে শেখ হাসিনার করা 'অন্যায় চুক্তিগুলো' জনসম্মুখে প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা না হলে, মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করবে। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মিরপুরে গণঅভ্যুত্থানে নিহত দুজন– শহীদ তাহমিদ ও মাসুদ রানার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
এবিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন রিজভী।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, বাংলাদেশ গণতন্ত্রের অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের যেসব সুপারিশ থাকে, সেগুলো নতুন সরকার এলে বিবেচনা করবে। তাই আমরা বলছি, যত দ্রুত সম্ভব সংস্কারগুলো শেষ— করে আপনি (অন্তর্বর্তী সরকার) অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন দিন।
'পৃথিবীর কোথাও ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান হয় না' বলে মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এরা সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। তিনি বলেন, ইতালি, জার্মানিসহ পৃথিবীর কোথাও গণতন্ত্রকামী মানুষ ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান হতে দেয়নি।
শেখ হাসিনা মাফিয়া সিন্ডিকেটের প্রধান ছিলেন মন্তব্য রিজভী আরও বলেন, 'সাবেক প্রধানমন্ত্রী দস্যু দলের প্রধান ছিলেন। মাফিয়া সিন্ডিকেট যেভাবে কাজ করে, সেভাবেই শেখ হাসিনা কর্মকাণ্ড চালিয়েছিলেন। পুলিশ প্রশাসন, সিভিল প্রশাসনের প্রত্যেকটি জায়গায় তাঁর আশীর্বাদপুষ্টরা শত শত কোটি টাকা কামিয়েছেন। এ জন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম খানের গ্রামের বাড়িতে ৬ তলা বিল্ডিং, এই দিয়েই প্রশাসন সাজানো হয়েছে। এখন এরাই বিভিন্ন পর্যায়ে আছে। যারা অবৈধভাবে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে, তারা এখন শেখ হাসিনার পক্ষে কাজ করছে।'
শেখ হাসিনা সরকারের লুটপাটের বর্ণনা দিতে গিয়ে রিজভী সমবায় ব্যাংকে গ্রাহকদের জমা রাখা ৭৩৯৮ ভরি সোনা আওয়ামী লীগের নেতা মহিউদ্দিন আহমেদের (মহি) বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনার উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, 'কী দেশ ছিল এটা! শেখ হাসিনা তো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না, তিনি ছিলেন দস্যু ও মাফিয়া সিন্ডিকেটের প্রধান। অনাচার, অবিচার ও লুটপাট—দলের নেতা ও অনুগতদের এসবের লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছিল শেখ হাসিনা।'
অর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যে পরিবারগুলো আমরা দেখে গেলাম, তারা ছিল কর্মক্ষম পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাহমিদ এম এ পাস করলে তার চাকরি হতো। তার পরিবার নিম্ন মধ্যবিত্ত। কত স্বপ্ন নিয়ে তারা লেখা পড়া করেছে। এরা তো নিজের জীবন দিয়ে গণতন্ত্র কিনেছে, নিজের রক্ত দিয়ে এরা গণতন্ত্র কিনেছে। এটা যেন ব্যর্থ না হয়। এ সমস্ত পরিবার যেন না খেয়ে থাকে। আপনাকে অনুরোধ করব, যেসব পরিবারে শহীদ হয়েছে তাদের কোনো ভাই বা স্ত্রী যেই থাকুক তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি কোনো চাকরি যেন দেওয়া হয়। এটা খুব জরুরি প্রয়োজন।
রুহুল কবির রিজভী দুই শহীদ তাহমিদ ও মাসুদ রানার পরিবারের হাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও 'আমরা বিএনপি পরিবার'-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের নির্দেশনায় আর্থিক সহায়তা তুলে দেন। এ সময় বিএনপির নেতা মুন্সী বজলুল বাছিত, আতিকুর রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।