কর ফাঁকিবাজদের চিহ্নিত করতে ডাটা অটোমেশনে ঝুঁকছে এনবিআর
কর ফাঁকিবাজদের চিহ্নিত করার পদ্ধতিকে আরও উন্নত করতে একটি আন্তর্জাতিক মানের ঝুঁকি বিশ্লেষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ডাটা অটোমেশনের উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এই উদ্যোগকে সহায়তা করতে রাজস্ব কর্তৃপক্ষ করদাতাদের তথ্য সংগ্রহে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিশ্লেষণমূলক পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, 'আমরা কর ফাঁকিবাজদের শনাক্ত করতে আন্তর্জাতিক ঝুঁকি বিশ্লেষণের মান অনুসরণ করার নির্দেশনা জারি করেছি।'
তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সঠিক করদাতাদের তথ্য পাওয়া একটি পূর্বশর্ত বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, প্রয়োজনীয় তথ্য জমা থাকলে করদাতাদের যত কম সম্ভব দুর্ভোগ পোহাতে হবে। একই সাথে, কর ফাঁকিবাজদের ধরতে সিস্টেমটি সাজানো সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, এনবিআরের অডিট পদ্ধতি এখনও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে চলমান থাকায় পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়। ম্যানুয়াল পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলে উল্লেখ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত রায়ের ভিত্তিতে ট্যাক্স ফাইলগুলো পর্যালোচনা করেন। সেই সিস্টেম থেকে সরে আসতে অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।
ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য নতুন কর ফাইল বাছাই সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে এনবিআর।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর এনবিআরের ট্যাক্স অডিট, ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সদস্য মো. আলমগীর হোসেন সব মাঠ পর্যায়ের কর অফিসকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বর্তমান ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নতুন অডিট বাছাই স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়া ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আয়কর সার্কেলে সরকারি চাকরিজীবীদের অনলাইনে আয়কর দাখিল (ই-রিটার্ন) বাধ্যতামূলক করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সব তফশিলি ব্যাংক, মোবাইল টেলিকম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ, ম্যারিকো বাংলাদেশ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ, বাটা সু কোম্পানি (বাংলাদেশ) ও নেসলে বাংলাদেশসহ কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তাদের জন্য ই-ফাইলিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
২০২৪-২০২৫ করবর্ষে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আয়কর রিটার্ন দাখিল ও পরিশোধ সহজ করাই এনবিআরের লক্ষ্য।
৯ সেপ্টেম্বর চালু হওয়া অনলাইন রিটার্ন দাখিলের সিস্টেমটিতে করদাতারা ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কার্ড পেমেন্ট এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করতে পারবেন। এছাড়াও, এটি দাখিল করা রিটার্ন, রসিদ, আয়কর সনদ এবং টিআইএন সনদ ডাউনলোড করার সুযোগ দেয়। অতীতের ই-রিটার্নও অ্যাক্সেস করা যাবে।
আপডেটেড নিরীক্ষা নির্দেশিকা অন্তর্ভুক্ত করে নতুন প্রবর্তিত আয়কর আইন ২০২৩ সম্ভাব্য বর্ধিত আমলাতন্ত্র এবং ব্যয় সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়। এই নির্দেশিকা অনুযায়ী করদাতাদের একাধিক জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেগুলো গোপন লেনদেন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার সৃষ্টি করে।
এসব সমস্যা সমাধানে অডিট ট্রান্সপারেন্সি বাড়াতে 'রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইঞ্জিন' সফটওয়্যার তৈরি করছে এনবিআর। এই সফটওয়্যারটি অন্যান্য সরকারি সংস্থার সঙ্গে মিলে ট্যাক্স ফাইল অডিটে ঝুঁকির বিষয়গুলো ব্যবহার করে কর ফাঁকির বিরুদ্ধে কাজ করবে।