গাজীপুরে ২৪ ঘণ্টার শ্রমিক বিক্ষোভে অচল মহাসড়ক, ২০ কিলোমিটার যানজট
গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় গতকাল শনিবার সকাল থেকে রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ করে রেখেছেন পোশাক শ্রমিকরা।
বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে গতকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় টি অ্যান্ড জেড অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা।
অবরোধের কারণে সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে মহাসড়কের উভয়পাশে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের তৈরি হয়েছে। দিনভর যাত্রী ও পথচারীদের এ ভোগান্তি রাত পেরিয়ে আজ সকাল পর্যন্ত গড়িয়েছে।
রোববার (১০ নভেম্বর) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান।
তিনি জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হওয়া শ্রমিক আন্দোলন রাতভর চলছিল। এ কারণে মহাসড়কের উভয় পাশে টঙ্গী থেকে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া এ যানজট ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কোনাবাড়ী ছাড়িয়েছে।
ইব্রাহিম খান আরও বলেন, যানজটে আটকা পড়ে মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা বিকল্প পথে চলাচল করছে।
এছাড়া গাজীপুর মহানগর পুলিশের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজে বিকল্প সড়ক ব্যবহারের অনুরোধে করে একটি ট্রাফিক আপডেট দেওয়া হয়েছে। ওই আপডেটে বলা হয়েছে, 'সম্মানিত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ব্যবহারকারী যাত্রীবৃন্দের জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে, বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে গার্মেন্টসের শ্রমিকগণ কর্তৃক ভোগড়া বাইপাস ও মালেকের বাড়ীর মাঝামাঝি কলম্বিয়া গার্মেন্টসের সামনে গতকাল সকালে শুরু করা মহাসড়ক অবরোধ এখন পর্যন্ত (সকাল ৭টা) অব্যাহত আছে। বিধায়, সম্মানিত যাত্রীগণকে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।'
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সঙ্গে রোববার সকালে লাঠিসোটা হাতে কিছু বহিরাগত যোগ দিয়েছেন।
তারা আরও জানান, যানজটে আটকা পড়া বেশিরভাগই পণ্য পরিবহন ও যাত্রী পরিবহনের গাড়ি। এসব গাড়ি গত রাতে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করে যানজটে আটকা পড়ায় আর কোনো দিকে যেতে পারেনি। আটকে পড়া পণ্যবাহী যানবাহনের মধ্যে পচনশীল পণ্যও রয়েছে। যাত্রীবাহী অনেক বাস থেকে যাত্রীরা নেমে পায়ে হেঁটে বা বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করছেন।
তাকওয়া পরিবহনের হেলপার আসিফ বলেন, রোববার সকালে জৈনা বাজার থেকে যাত্রী তুলে জয়দেবপুর চৌরাস্তার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। বাসটি কয়েক ধাপে ছোট ছোট যানজট পেরিয়ে রাজেন্দ্রপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান পর্যন্ত যেতেই যানজটে আটকে যায়।
এদিকে শ্রমিক আন্দোলনে যানজটের কারণে মহাসড়কে দুরপাল্লার যানবাহন কম চলাচল করছে। স্বল্প দুরত্বের লোকাল পরিবহন চলাচল করলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ তুলছেন যাত্রীরা।
সকালে রাজধানীর উদ্দেশে যেতে শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় দূরপাল্লার বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ষাটোর্ধ্ব আব্দুল কাদির। তিনি বলেন, 'জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ১৫০ টাকা ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু অন্যান্য বাসগুলো জানাচ্ছে, রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত যাওয়া যাবে। বাকি রাস্তায় যানজট। এখন বেশ চিন্তায় আছি।'
গাজীপুর শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় টি অ্যান্ড জেড অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা না দিয়ে কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ করে রেখেছে। ওই গ্রুপের ৬টি কারখানার সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরেই তাদের পাওনা বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে আসছিলেন। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় শনিবার সকালে শ্রমিকরা কারখানার সামনে জড়ো হয়ে প্রথমে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তারা মালেকের বাড়ির কলম্বিয়া মোড় এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা বলেন, গত এপ্রিল মাস কারখানা বন্ধ ছিল। পরে কারখানা খুললেও দুই মাসের বেতন না দিয়ে কর্তৃপক্ষ টালবাহানা শুরু করে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বারবার বেতন পরিশোধের তারিখ দিলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেনি।
কারখার শ্রমিক আবুল কালাম বলেন, 'মালিকপক্ষ আমাদের পাওনা বেতন না দিয়েই কারখানা বন্ধ রেখেছে। আমরা বেশ কিছুদিন ধরেই বকেয়া পরিশোধের দাবিতে আন্দোলন করছি। আমাদের দাবি মেনে নিলে মহাসড়ক ছেড়ে দেব।'
তবে এ বিষয়ে চেষ্টা করেও টি অ্যান্ড জেড অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) নাজির আহমেদ শনিবার রাতে বলেন, 'সকাল থেকে আমরা রাত ৭টা পর্যন্ত ১০-১২ বার শ্রমিকদের সাথে দফায় দফায় আলোচনা করেছি। মালিকপক্ষের সাথে আলোচনা করে দ্রুত তাদের বকেয়া বেতন আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অতীতে মালিকপক্ষ কথা রাখেনি—এমন অভিযোগ তুলে শ্রমিকরা প্রথমে বলেছিলেন, দুপুর ২ টায় অবরোধ তুলে নেবে, পরে বলেছিলেন, বিকেল পাঁচটায় অবরোধ তুলে নেবেন। কিন্তু তারা অবরোধ তুলে নেননি।'
তিনি বলেন, 'আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু তারা কোনো আশ্বাস মানতে রাজি হচ্ছে না। ফলে মহাসড়কের যানজট নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না।'