গাজীপুরে অতিরিক্ত কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল শ্রমিকের
গাজীপুর সদর উপজেলার মেম্বারবাড়ি এলাকায় 'জায়ান্ট টেক্সটাইল লিমিটেড'- কারখানায় কর্তৃপক্ষের চাপে বাড়তি সময় কাজ করতে গিয়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার (৯ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে কারখানার ওয়াশিং সেকশনে ওয়াশিং মেশিনের ড্রায়ারে আটকে তার মৃত্যু হয়। তবে, শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি রাত সাড়ে ৩টার দিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ জানতে পারে।
নিহত নয়ন মিয়া (২২) ময়মনসিংহ সদরের চর বড়বিলা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে। তিনি মেম্বারবাড়ি এলাকায় ভাড়া থাকতেন। নয়ন জায়ান্ট টেক্সটাইল লিমিটেড কারখানায় সহকারী অপারেটর পদে চাকরি করতেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হালিম বলেন,'জায়ান্ট টেক্সটাইল কারখানায় শ্রমিক নিহতের খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কারখানার আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় তার স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিরাজুল ইসলাম বলেন, 'কারখানায় নয়নের ডিউটি ছিল শনিবার সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। শিফট শেষে ছুটি হলে তার সাথের সকলে চলে গেলেও, কারখানা কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত কাজের জন্য নয়নকে রেখে দেয়। সে অতিরিক্ত কাজ করতে না চাইলেও, কর্তৃপক্ষের চাপে চাকরি হারানোর ভয়ে বাধ্য হয়ে থেকে যান। কিন্তু তাকে অতিরিক্ত কাজের জন্য রাখলেও, পরবর্তী শিফটের কাউকে এ বিষয়ে কিছুই জানায়নি কর্তৃপক্ষ।'
তিনি আরও বলেন, 'পরের শিফটে রাত ৮টায় নয়ন মিয়া ওয়াশিং মেশিনের ভেতরে কাপড়চোপড় রাখার জন্য বস্তায় ভরে সেগুলো নিয়ে মেশিনের ভেতরে ঢুকে পড়েন। এসময় পরের শিফটের অপারেটর এসে মেশিনের ভেতরে কাপড় দেখে চেক না করেই মেশিন চালু করেন। এতে মেশিনের ভেতর পেঁচিয়ে ও গরম পানিতে পুরো শরীর ঝলসে গিয়ে নয়নের মৃত্যু হয়। রাত ৩টার দিকে অপারেটর কাপড় বের করতে চাইলে ভেতরে কিছু একটা দেখে চিৎকার দেন এবং কারখানার ইনচার্জকে জানান। পরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মেশিনের গরম পানি থেকে নয়নের গলিত লাশ উদ্ধার করেন।'
নিহতের স্ত্রী ইমা আক্তার বলেন, 'আমার স্বামীর ডিউটি ছিল রাত ৮টা পর্যন্ত। কারখানা কর্তৃপক্ষ তাকে জোর করে আরও দুই ঘণ্টা ডিউটি করার জন্য থাকতে বাধ্য করে।'
তিনি অভিযোগ করেন, 'তারা প্রায়ই তাকে [নয়নকে] দিয়ে অতিরিক্ত ডিউটি করাচ্ছিল। আমার স্বামীর কাজ ছিল পোশাকের বস্তা টানাটানি করা। অপারেটর না রেখে তাকে দিয়ে ওয়াশিং মেশিনের কাজ করানো হচ্ছিল। অপারেটরের কাজ করার ধারণা না থাকায় তিনি মেশিনের ভেতরে ঢুকেছিলেন। পরের শিফটের লোক এসে মেশিন চালু করে দেয়। কারখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। রাতে লাশ পাওয়া যায়। কর্তৃপক্ষ আমাদের না জানিয়ে লাশ পুলিশের কাছে দেয়। সকালে আমি বিষয়টি জানতে পারি।'
এ ব্যাপারে জায়ান্ট টেক্সটাইল লিমিটেড কারখানার ব্যবস্থাপক সোহেল রানা বলেন, 'নয়ন মিয়ার রাত ৮টা পর্যন্ত ডিউটি ছিল। কাজের চাপ থাকায় আরও দুই ঘণ্টার জন্য তাকে কাজে রাখা হয়েছিল। টিফিন বিরতির সময় অপারেটর চলে গেলেও, সে বস্তাভরে কাপড় নিয়ে মেশিনে দিচ্ছিল। টিফিন বিরতির পর অপারেটর এসে তাকে না পেয়ে মেশিন চালু করে দেয়। এতে অসাবধানতাবশত মেশিনে পেঁচিয়ে তার মৃত্যু হয়।'
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২-এর পরিদর্শক আব্দুল লতিফ বলেন, 'প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, নয়নের সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ডিউটি ছিল। রাত ১০টা পর্যন্ত কারখানা কর্তৃপক্ষ তাকে দিয়ে জোর করে কাজ করার জন্য রেখে দেয়। কিন্তু তাকে রেখে দেওয়ার বিষয়ে পরবর্তী শিফট অপারেটরকে জানায়নি। না জানানোর কারণে অসাবধানতার ফলে এরকম দুর্ঘটনা ঘটেছে। কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার কারণে এমন মৃত্যু হয়েছে।'