গাজীপুরে বকেয়া বেতন ও চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
দুই মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে এবার গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গিতে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। আজ বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকাল পৌনে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত 'তারাটেক্স ফ্যাশন লিমিটেড'- নামক কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
জানা যায়, সকাল পৌনে ৯টায় কারখানাটির বিক্ষুব্ধ কয়েক হাজার শ্রমিক ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গির আউচপাড়ায় এশিয়া পাম্প এলাকায় অবস্থান নিলে মহাসড়কটির উভয় পাশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে শিল্পপুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সাড়ে ১০টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করে মহাসড়কের পাশে অবস্থান নেয়। ফলে সকাল সাড়ে ১০টার পর পুনরায় ওই মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্র্যাফিক) মো. ইব্রাহিম খান বলেন, 'কারখানাটির শ্রমিকরা মহাসড়কে অবস্থান নেওয়ায় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে টঙ্গির শালিকচূড়া থেকে টঙ্গি বাজার ব্রিজ ও গাজীপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বড় বাড়ি পর্যন্ত দীর্ঘ যানবাহনের জ্যাম লেগে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন এ সড়ক ব্যবহারকারী যাত্রীরা।'
তিনি আরও জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা শ্রমিকরা সঙ্গে আলোচনা করার পর, শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
অপরদিকে, গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি এলাকায় এম এম নিটওয়্যার লি. কারখানার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদ ও চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করে শ্রমিকরা। এসময় তাদের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে শিল্প পুলিশ ও কারখানার স্টাফদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এঘটনায় সিকিউরিটি ইনচার্জ মো. আজিজুর রহমান (৪৫) ও পুলিশ সদস্য নাহিদ (২৮) হোসেনসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। নাহিদ হোসেন গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এ কনস্টেবল পদে কর্মরত আছেন।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকাল ৯ টার সময় কোনাবাড়িতে অবস্থিত এম এম নিটওয়্যার লি. কারখানার ভিতরে এ ঘটনা ঘটে।
এম এম নিটওয়্যার লি. এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন অভিযোগ করেছেন, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে চাবি নিয়ে যান। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, শিল্প পুলিশ ও গাজীপুর মেট্রপলিটন পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিল।
শিল্প পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকরা জানায়, শ্রমিক আন্দোলনের সময় কারখানায় হামলা ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে শ্রম আইন অনুযায়ী এম এম নিটওয়্যার লিমিটেডসহ কয়েকটি কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়। তাদের মধ্যে এম এম নিটওয়্যার ও মামুন নিটওয়্যার লি. এর ১১৩ জন শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়। ছাঁটাইকৃত শ্রমিকরা তাদের সকল পাওনাদি বুঝে নিলেও ফের চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্য কারখানা ফটকে জড়ো হয়।
তাদের কাজে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য মঙ্গলবার থেকে দুইদিন সকাল থেকে ওই কারখানার সকল শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করে। পরে কারখানার ভিতরেই অবস্থান করে বিক্ষোভ করতে থাকে তারা।
এম এম নিটওয়্যার লি. এর এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, শ্রমিকরা আজও কর্মবিরতি পালন করছে। তাদের দাবি ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের পুনর্বহাল করতে হবে। কিন্তু ছাঁটাইকৃত শ্রমিকরা কিন্তু তাদের পাওনাদি নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের কোনো অভিযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যে অবস্থা সময়মতো শিপমেন্ট দিতে না পারলে অর্ডার বাতিল হয়ে যাবে। বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুর শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ মো. ফজল আলী জানান, নাহিদ হোসেন নামে এক পুলিশ সদস্য আহত অবস্থায় মেডিকেল এসেছেন। তার মাথায় আঘাত লেগেছে দুটি সেলাই দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কোনাবাড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম জানান, এম এম নিটওয়্যার লি. কারখানার শ্রমিকরা ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের পুনর্বহালের দাবিতে দুই দিন যাবত কর্মবিরতি পালন করছেন। এ পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলছেন। পুলিশ সদস্য ও কারখানার স্টাফ আহত হয়েছেন।