আইনজীবী সাইফুল হত্যা: হত্যাকাণ্ডের বিচার ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে দিনভর উত্তাল চট্টগ্রাম
জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে বুধবার (২৭ নভেম্বর) দিনভর উত্তাল ছিল বন্দর নগরী। এসময় বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘকে (ইসকন) নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়।
এদিন হত্যাকাণ্ডের শিকার আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের প্রথম জানাজা তার কর্মস্থল চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়। সহকর্মীকে হত্যার প্রতিবাদে বুধবার কর্মবিরতি পালন করেছিলেন আইনজীবীরা। পাশাপাশি আগামীকাল বৃহস্পতিবারও কর্মবিরতিসহ একাধিক কর্মসূচি ঘোষণা করে জেলা আইনজীবী সমিতি।
আগামীকালকের কর্মসূচি সম্পর্কে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, "উগ্রবাদী সংগঠন 'ইসকন' এর সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার প্রতিবাদে সমিতির পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালো ব্যাজ ধারণ করা, ২৮ নভেম্বর তারিখ চট্টগ্রামের সকল আদালতের কার্যক্রমে কর্মবিরতি, আইনজীবী আলিফের আত্মার মাগফেরাত কামনায় বৃহস্পতিবার বাদ জোহর কোর্ট হিল জামে মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন, একইদিনের অবকাশকালীন প্রীতি সমাবেশে বাতিল।"
এদিকে আইনজীবী সাইফুলের দ্বিতীয় জানাজা সকাল সাড়ে ১১টায় নগরীর ওয়াসা মোড়ের জমিউতুল ফালাহ মসজিদ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নিয়েছিলেন ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্ল্যাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, সাবেক সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, জামায়াত ইসলামীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, নগর জামায়াতের আমীর শাহাজাহান চৌধুরী, সেক্রেটারি নুরুল আমীন, হেফাজত ইসলামের নেতা মুফতি ইজাহারুল ইসলাম প্রমুখ। জানাজা পূর্ববর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ইসকন নিষিদ্ধ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানানো হয়।
অন্যদিকে জানাজাস্থল থেকে হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমের নেতৃত্বে বিশাল মিছিল নিয়ে নগরীর টাইগারপাস মোড়ে গিয়ে শোক ও সম্প্রীতি সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সমাবেশ থেকে আইনজীবী হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। ইসকন নিষিদ্ধেরও দাবি জানান।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, 'আমাদের দেশে সব ধর্মের সহাবস্থান থাকবে। আমরা সবার অধিকার রক্ষায় কাজ করব। কিন্তু ধর্মের দোহাই দিয়ে উগ্রবাদী সংগঠন পরিচালনা করলে– বাংলাদেশে এক হাত জায়গাও দেওয়া হবে না। আমার ভাই সাইফুলকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই ইসকনকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে।'
'এই ইসকন জঙ্গি, তারা স্বৈরাচারের সঙ্গী' বলে সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা স্লোগান দেন। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাসেল আহমেদ, কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ প্রমুখ।
সারজিস আলম বলেন, 'আমরা সব ধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু কেউ যদি সহানুভূতিকে দুর্বলতা মনে করে, তাহলে ছাড় দেওয়া হবে না। এই চট্টলায় ইসকনের জায়গা হবে না। আমরা ১৬ বছরের খুনি হাসিনাকে দেশছাড়া করেছি। এমন জঙ্গি ইসকনকে দেশছাড়া করা আমাদের কাছে হাতের ময়লা।'
এদিকে একই ঘটনার প্রতিবাদে বিকেল ৩টায় নগরীর বহাদ্দারহাট মোড় থেকে বিশাল মিছিল করে করে ইসলামী ছাত্র শিবির। মিছিলটি নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন প্লানিং অ্যান্ড ডেভোলোপমেন্ট সম্পাদক ডা. উসামা রাইয়ান। আরো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি ফখরুল ইসলাম ও মহানগর দক্ষিণের সভাপতি শহীদুল ইসলাম।
ইসকন স্বৈরাচার শেখ হাসিনার মদদে দেশবিরোধী কার্যক্রমে নিয়োজিত আছে অভিযোগ করে নিষিদ্ধের দাবি জানান বক্তারা। অন্যদিকে বিকেলে নগরীর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকেও হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করা হয়।