গাজীপুরে ৬ষ্ঠ দিনের মতো সড়ক অবরোধ বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিকদের
গাজীপুর মহানগরীর সারাবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা এক মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে ৬ষ্ঠ দিনের মতো চক্রবর্তী এলাকায় চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করে আজও বিক্ষোভ করছে।
অপরদিকে, অবরোধ শুরু হওয়ার আগে সড়ক পারাপারের সময় হামিম গ্রুপের একটি কারখানার তিন নারী শ্রমিক আহত হলে একই সড়ক অবরোধ করেন ওই কারখানার শ্রমিকরা।
চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় আজও দূর্ভোগে পড়েছেন এ সড়কে চলাচলকারী মানুষজন। এছাড়া উত্তরবঙ্গের যানবাহনগুলো বিকল্প হিসেবে গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও ধামরাই-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়ক ব্যবহার করে ঢাকার সাথে সড়ক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। স্থানীয়রা সড়ক সচল করার দাবি জানিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বেক্সিমকো ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পার্কে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে পোশাক ও সিরামিক কারখানায় একচল্লিশ হাজার কর্মী রয়েছে। পার্কের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা এক মাসের (অক্টোবর) বকেয়া বেতনের দাবিতে ৬ষ্ঠ দিনের মতো চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কে অবস্থান নেয়। এতে চরম যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করছেন।
গত বৃহস্পতিবার তারা একই দাবীতে অবরোধ করে আসছেন। পরে শুক্রবার বিরতি দিয়ে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে পুনরায় মহাসড়ক অবরোধ করে। রাতে সড়ক ছেড়ে দিলেও পরদিন আবারও তারা সড়ক অবরোধ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দিনভর আন্দোলন করেও কারো কোন সাড়া পাননি শ্রমিকরা। পরে রাত ১০টার দিকে অবরোধ তুলে নিয়ে বাড়ি চলে গেলে রাত ১০টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। কিন্তু তাদের দাবী পুরন না হওয়ায় একই দাবীতে তারা বুধবারও একই মহাসড়ক অবরোধ করেছে।
সূত্র আরো জানায়, গাজীপুর মহানগরীর কাশেমপুর থানাধীন সারোবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ভিতরে এসব কারখানার মালিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সালমান এফ রহমানকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি শ্রমিকদের বেতন সঠিক সময়ে পরিশোধ করতে পারছে না। প্রতিমাসেই শ্রমিকরা আন্দোলন করে বেতন আদায় করছে। গত কয়েক মাসের মতো চলতি মাসেও অক্টোবরের বেতনের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে।
এছাড়াও পুলিশ জানায়, গত মঙ্গলবার রাতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে ২৩ জনকে আটক করার পর পুলিশে সোর্পদ করেছিল। তাদের যাচাই শেষে মুচলেকা রেখে রাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে, জিরানী এলাকায় হামিম গ্রুপের দ্যাটস ইট নিটওয়্যার কারখানার শ্রমিকরা সকাল ৬টার দিকে কাজে যোগদিতে জিরানী এলাকায় চন্দ্রা-নবীনগর পারাপারের সময় তিন নারী শ্রমিক অজ্ঞাত গাড়ী চাপায় আহত হয়। পরে গুজব ছড়িয়ে পড়ে তাদের মধ্যে এক নারী শ্রমিক নিহত হয়েছে। এমন গুজবে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত জিরানী এলাকায় চন্দ্রা -নবীনগর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে।
পরে খবর পেয়ে সাড়ে ১১ টার দিকে সেনা সদস্যরা ও শিল্প পুলিশ এসে শ্রমিকদেরকে বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
এছাড়াও গত ১ নভেম্বর থেকে মহানগরীর পানিশাইল এলাকার ডরিন গ্রুপের তিনটি কারখানা বিনা নোটিশে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছিল কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদের ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবীতে সোমবার থেকে আন্দোলন শুরু করে ঐ কারখানার শ্রমিকরা। দুই দিন আন্দোলনের পর মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষ আগামী বৃহস্পতিবার কারখানা খুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে ঐ কারখানার শ্রমিকরা তা মেনে নেয়। একারণে ডরিনের শ্রমিকরা আজ আন্দোলনে যোগ দেয়নি।
জিএমপি কাশিমপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে শ্রমিকদের অবরোধের কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। শ্রমিকরা সড়ক থেকে চলে গেলে যান চলাচল শুরু হবে।