বকেয়া বেতনের দাবি, দিনভর অবরোধের পর সড়ক ছেড়েছেন বেক্সিমকোর শ্রমিকরা
গাজীপুর মহানগরীর সারাবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকেরা এক মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে, ৬ষ্ঠ দিনের মতো চক্রবর্তী এলাকায় চন্দ্রা -নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। আজ বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে অবরোধ তুলে নিয়ে চলে যান শ্রমিকরা।
তবে দিনভর এ অবরোধের একারণে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েন এ সড়কে চলাচলকারী্রা। উত্তরবঙ্গের যানবাহন বিকল্প গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও ধামরাই-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়ক ব্যবহার করে ঢাকার সাথে সড়ক যোগাযোগ অব্যাহত রাখে।
এর আগে দুপুরে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দুই দিনের (২২ নভেম্বরের) মধ্যে বেতন পরিশোধ করার আশ্বাস দেয়া হলে— শ্রমিকরা দুপুর ২টার দিকে চন্দ্রা- নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে। কিন্তু এক ঘন্টা পর আবারও তারা সড়ক অবরোধ করে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, বেক্সিমকো শিল্প পার্কে পোশাক ও সিরামিক কারখানার ৪১ হাজার কর্মী রয়েছেন। পার্কের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা এক মাসের (অক্টোবর) বকেয়া বেতনের দাবিতে বুধবার সকাল ৯টা থেকে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কে অবস্থান নেন। এতে চরম যানজটের সৃষ্টি হয়।
খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করেন। এরপরে প্রথমে অবরোধ তুলে নিলেও্ – এক ঘন্টার পর পুনরায় অবরোধ করে শ্রমিকরা। তাদের দাবি, বকেয়া বেতন দিলেই তারা অবরোধ তুলে নেবেন।
সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার থেকে তারা একই দাবিতে অবরোধ করে আসছেন। মাঝখানে শুক্রবার বিরতি দিয়ে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে পুনরায় মহাসড়ক অবরোধ করেন। শনিবার রাতে সড়ক ছেড়ে দিলেও পরদিন থেকে আবারও তারা সড়ক অবরোধ করে আসছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখার এই ধারাবাহিকতা চলছে।
তবে মঙ্গলবার দিনভর আন্দোলন করেও কারো কোন সাড়া পাননি শ্রমিকরা। পরে রাত ১০টার দিকে অবরোধ তুলে নিয়ে শ্রমিকরা চলে গেলে রাত ১০টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। কিন্তু তাদের দাবি পূরণ না হওয়ায়- তারা বুধবারও একই মহাসড়ক অবরোধ করেছে।
এভাবে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বেক্সিমকোর শ্রমিকরা গড়ে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দিনভর অবরোধ করে রাখছে। প্রতিদিন ১১-১৩ ঘন্টা চন্দ্রা -নবীনগর সড়ক বন্ধ থাকায় মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
গাজীপুর মহানগরীর কাশেমপুর থানাধীন সারোবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ভিতরে এসব কারখানার মালিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সালমান এফ রহমানকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তার ব্যাংক হিসাবও স্থগিত করা হয়। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি শ্রমিকদের বেতন সঠিক সময়ে পরিশোধ করছে না। প্রতিমাসেই শ্রমিকরা আন্দোলন করে বেতন আদায় করছে।
এদিকে, শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য সরকার বেক্সিমকোকে ঋণ দিয়েছে, এমন সংবাদেও খুশি নন শ্রমিকরা। বেতন পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানান তারা।
পুলিশ জানায়, গত মঙ্গলবার রাতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে ২৩ জনকে আটক করার পর পুলিশে সোর্পদ করেছিল। তাদের যাচাই শেষে মুচলেকা রেখে রাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে, জিরানী এলাকায় হামিম গ্রুপের দ্যাটস ইট নিটওয়্যার কারখানার শ্রমিকরা সকাল ৬টার দিকে কাজে যোগ দিতে জিরানী এলাকায় চন্দ্রা-নবীনগর পারাপারের সময় ৩ নারী শ্রমিক গাড়িচাপায় আহত হন। পরে গুজব ছড়িয়ে পড়ে তাদের মধ্যে এক নারী শ্রমিক নিহত হয়েছে্ন। এমন গুজবে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত জিরানী এলাকায় চন্দ্রা -নবীনগর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।
ওই কারাখানার শ্রমিকরা জানান, সকাল ৬টার দিকে কারখানার সামনে বাস চাপায় আমাদের কারখানার ৩ শ্রমিক আহত হন। তাদের মধ্যে একজন মারা গেছে বলে শুনেছি। এর প্রতিবাদে ফ্লাইওভার নির্মাণ ও কারখানার অব্যবস্থাপনা দূর করাসহ বিভিন্ন দাবিতে আমরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করি।
পরে খবর পেয়ে সাড়ে ১১টার দিকে সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশ এসে শ্রমিকদেরকে বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
এছাড়াও গত ১ নভেম্বর থেকে মহানগরীর পানিশাইল এলাকার ডরিন গ্রুপের ৩টি কারখানা বিনা নোটিশে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছিল কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদের ও কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে সোমবার থেকে আন্দোলন শুরু করে উক্ত কারখানার শ্রমিকরা। দুই দিন আন্দোলনের পর মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষ আগামী বৃহস্পতিবার কারখানা খুলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে ঐ কারখানার শ্রমিকরা তা মেনে নেয়। একারণে ডরিনের শ্রমিকরা আজ আন্দোলনে যোগ দেয়নি।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) আকবর আলী খান বলেন, বুধবারে শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। আগামী দু'দিনের মধ্যে বেতন পাবে এমন আশ্বাস পেয়ে সড়ক ছেড়ে দেন, তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই আবারও সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে রেখেছেন। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে শ্রমিকরা সড়ক ছেড়েছেন।