২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন স্থগিত করার কোনো কারণ নেই: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য তিনটি শর্ত পূরণ করায় ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন স্থগিত করার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং অর্থনীতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
আজ সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, "পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য সমস্ত মানদণ্ড পূরণ করেছে। তাই, গ্র্যাজুয়েশন স্থগিত করার কোনো কারণ নেই।"
তিনি বলেন, "সরকার শুধু তখনই স্থগিতকরণের জন্য আবেদন করতে পারে, যদি কোনো অর্থনৈতিক দুর্যোগ ঘটে।"
তিনি আরও বলেন, "একটি বাণিজ্যিক গোষ্ঠী, যারা শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা উপভোগ করছে, তারা চায় এই সুবিধাগুলো চিরকাল অব্যাহত থাকুক। গত ১৫ বছরেও আমরা তাদের ভূমিকা দেখেছি।"
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ইমরান মতিন বলেন, "দেশের ৮৫ শতাংশ সম্পদ শুধু ১০ শতাংশ মানুষ নিয়ন্ত্রণ করছে।"
তিনি আরও বলেন, "যদি দারিদ্র্য সীমার ওপরে থাকা ব্যক্তিরা সপ্তাহে দুইদিন কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তাহলে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়ে যাবে।"
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ২৮ আগস্ট গঠিত হয়েছিল। কমিটিকে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করার জন্য তিন মাস সময় দেওয়া হয়। এই প্রতিবেদনের লক্ষ্য ছিল, বহু বছর ধরে চলমান অব্যবস্থাপনা এবং বিকৃত তথ্যের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতির একটি পরিষ্কার চিত্র উপস্থাপন করা।
কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি গতকাল (১ ডিসেম্বর) ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে ৪০০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেন।
শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনার শাসনামলে ১৫ বছরে প্রকল্পের খরচ গড়ে ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং প্রকল্পগুলো শেষ করতে গড়ে পাঁচ বছরের বেশি সময় লেগেছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এর মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা ৬০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় ১৪ থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার (১.৬১ থেকে ২.৮০ লাখ কোটি টাকা) রাজনৈতিক চাঁদাবাজি, ঘুষ, এবং বাজেট বাড়ানোর মতো বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে নষ্ট হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, জমি অধিগ্রহণের সময় তহবিলের ব্যাপক অপব্যবহার এবং রাজনৈতিকভাবে পছন্দের প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করাই ছিল অবকাঠামো ও সামাজিক বিনিয়োগের কার্যকারিতা কমানোর প্রধান কারণ।