ছাত্র সংহতি সপ্তাহ: বিপরীতমুখী ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির, দূরত্ব রেখে চলছে প্রগতিশীল সংগঠনগুলো
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ পালনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবির পরস্পরের বিপরীত অবস্থান জানান দিয়েছে। অন্যদিকে, প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগপৎ কর্মসূচি থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছে।
সারাদেশে আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক দ্বন্দ্ব নিরসনসহ ৩ উদ্দেশ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে গত ২৬ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর 'ছাত্র সংহতি সপ্তাহ' পালন করেছে দেশের ১৯টি ছাত্র সংগঠন।
আজ বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সব ছাত্রসংগঠনের সাথে আবারও আলোচনায় বসবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সভায় জাতীয় ছাত্র কাউন্সিল গঠনের বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা আবারও সব ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে বসবো বুধবার (আজ)। আপাতত ছাত্র সংহতি সপ্তাহ শেষ। আবারও নতুন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে। আমরা সব সংগঠনের বিভাজন ভুলে একসাথে বসতে চাই। এই সময় সবার ঐক্য জরুরি।"
গত ২৫ নভেম্বর রাতে রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যালয়ে ১৯ ছাত্র সংগঠনের জরুরি বৈঠকে আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক দ্বন্দ্ব নিরসনে পরবর্তী এক সপ্তাহ 'জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ' পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
একইসাথে সভায় আওয়ামী লীগের বিষয়ে 'জিরো টলারেন্স' ভূমিকায় থাকার এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে অবগত হতে এবং তাদেরকে ষড়যন্ত্র মুক্ত রাখতে কমিউনিটি ক্যাম্পেইন চালানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
উমামা ফাতেমা জানান, "ছাত্র সংহতি সপ্তাহ শেষ হলেও অন্য দুটি বিষয়ে আমাদের যুগপৎ অবস্থান অব্যাহত থাকবে।"
সম্প্রতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংহতি সপ্তাহ পালনে ছাত্রদল ও প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো ছাড়াই ১০টি দল সভা করেছে। সভায় অংশ না নেওয়ার বিষয়ে সেখানকার ছাত্র ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ গণমাধ্যমকে জানান, কেন্দ্রীয়ভাবে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছাত্রশিবির কোনো কর্মসূচিতে থাকলে সেখানে তারা যাবেন না। সে কারণেই ওই সভায় তারা অংশ নেননি।"
এদিকে, ছাত্র সংহতি উপলক্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ সংগঠন নিয়ে লিয়াজো কমিটি গঠন হয়— যেখানে একদিন পরে ছাত্রদল অংশ নিলেও ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্টসহ প্রগতিশীল সংগঠনগুলো দূরত্ব বজায় রাখে।
শিবিরসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের সাথে কর্মসূচি পালনের বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, "আমরা সংহতি প্রকাশ করে নিজস্ব কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছি। অন্যান্য ছাত্রসংগঠনও নিজ নিজ কর্মসূচি করছে। আমরা অন্যদেরকে সাথে নিয়ে কর্মসূচি করার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছি।"
তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সকল ছাত্রসংগঠনের সাথে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। ছাত্রদলের কারণে অন্যকোনো সংগঠনের রাজনীতি চর্চার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। অন্য সংগঠনের সাথে আমাদের নীতি ও আদর্শগত পার্থক্য আছে, কিন্তু তা পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নয়।"
এদিকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সাদেক আবদুল্লাহ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা সকল বিভাগীয় শহরে ছাত্র সংহতি সপ্তাহ উপলক্ষে সমাবেশ ও মিছিল করেছি। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা ৩৪ সংগঠনের সাথে মিটিং করেছি। যেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ দেশের অধিকাংশ সংগঠন ছিল। আমরা চেষ্টা করেছি, সবাইকে সাথে নিয়ে স্থিতিশীল ক্যাম্পাস গঠনে কাজ করার।"
ছাত্রদল ও ছাত্র ইউনিয়নের সাথে বৈঠকে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি না থাকার বিষয়ে তিনি জানান, সবাইকে সাধারণ ছাত্রদের ম্যান্ডেট বুঝেই রাজনীতি করতে হবে।
"আমরা মনে করি, ৫ আগস্টের পূর্বেকার ঐক্যবদ্ধ অবস্থান রাখতে না পারলে গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট ঠিক থাকবে না। তাদেরকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আসেননি। তবে তদের নেতৃবৃন্দের সাথে আমাদের যোগাযোগ আছে," যোগ করেন তিনি।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গত মিটিংয়ে আমরা একত্রে কর্মসূচি পালনের প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকটি সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচির বিষয়ে মতামত প্রদান করে। যার কারণে সংহতি সপ্তাহ পুরোপুরি সফল হয়নি। সবাই নিজেদের মতো কর্মসূচি দিয়েছে।"
তিনি বলেন, "আগামীকাল (আজ বুধবার) আবারও মিটিং আছে। সেখানে আমরা জাতীয় ছাত্র কাউন্সিলের ব্যাপারে মতামত রাখবো। সেটা হলে আশা করা যায়, ছাত্রসংগঠনগুলোর মাঝে বিভাজন থাকবেনা।"
ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের দ্বন্দের বিষয়ে তিনি বলেন, "গণঅভ্যুত্থানের জন্য যেমন একতা দরকার ছিল, রাষ্ট্র নির্মাণেও তেমনই ঐক্য দরকার। এখন দুটি সংগঠনের বিভেদের কারণে ঐক্য নষ্ট হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদেরকে প্রত্যাখান করবে।"
অন্যদিকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) এর সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা এখনও কোনো মিটিংয়ের দাওয়াত পাইনি। পেলেও আমরা যাবোনা, কারণ আমরা শিবিরের মতো কোনো সাম্প্রদায়িক সংগঠনের সাথে বসতে পারিনা।"
"আমরা মনে করি, গণঅভ্যুত্থান শেষ হওয়ায় বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মের আর দরকার নেই। আমরা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টসহ কয়েকটি প্রগতিশীল সংগঠনের সাথে নিজেদের মতো কর্মসূচি পালন করে যাবো," যোগ করেন বাহাউদ্দিন শুভ।