টঙ্গীতে জোড় ইজতেমা নিয়ে সাদ অনুসারীদের গাড়িতে জুবায়ের পন্থীদের হামলা
গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা শুরুর আগেই বিবাদমান তাবলীগের দুটি পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এরই অংশ হিসেবে দুপুরে এক পক্ষের হামলায় অপর পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন। এসময় একটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বেলা ১টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মন্নুগেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে জোড় ইজতেমা আয়োজন নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে প্রবেশ করাকে কেন্দ্র করে মাওলানা সাদ অনুসারীদের বহনকারী একটি প্রাইভেটকারে ভাঙচুর ও মহাসড়ক অবরোধ করেছে তাবলিগ জামাতের মাওলানা জুবায়েরের (শুরায়ী নেজামী) অনুসারীরা।
জানা যায়, এতে তাবলীগের ৫ মুরুব্বী আহত হয়েছেন এবং প্রায় এক ঘন্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এ নিয়ে দিনভর টঙ্গীর ইজতেমা এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে।
স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল সকাল থেকে শুরায়ে নিজামী বা মাওলানা জুবায়েরের পাঁচ শতাধিক অনুসারী টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহগাসড়কের মুন্নু গেইট এলাকায় অবস্থান নেন। তারা ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুই মুসল্লী নিহত হওয়ার ঘটনায় সাদপন্থীদের বিচারের দাবিতে মহাসড়ক এক ঘন্টা অবরোধ করে।
এসময় সেই স্থান দিয়ে ভারতের মাওলানা সাদ অনুসারী অংশের তাবলীগের শীর্ষ মুরুব্বীদের নিয়ে একটি মাইক্রোবাস ওই এলাকা অতিক্রমকালে শুরায়ে নিজামীর অনুসারীরা তাদের চিনে ফেলে। পরে তারা ঐ মাইক্রোবাসে হামলা করে ভাঙচুর করে। এসময় সাদপন্থীদের ৫ জন আহত হয়েছে।
ঘটনার পর পর ভারতের মাওলানা সাদ অনুসারীরা টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে আয়োজিত জরুরি সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, 'দ্বিতীয় ধাপের বিশ্ব ইজতেমার আয়োজনের পূর্বে প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ২০ ডিসেম্বর ইজতেমা ময়দানে জোড় ইজতেমা আয়োজন করার বিষয়ে কথা বলতে আমরা আজ সকালে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীনের সঙ্গে দেখা করি। জেলা প্রশাসক বিষয়টি নিয়ে আমাদেরকে গাজীপুর মহানগর পুলিশের দক্ষিণের উপ-কমিশনার এন এম নাসিরুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। পরে আমরা গাজীপুর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়েছিলাম।'
তিনি বলেন, 'পুলিশ সদস্যদের নিয়ে উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। আমরা ময়দানে প্রবেশ করিনি। আমাদের একটি প্রাইভেটকার ময়দান থেকে অনেক দূরে মহাসড়কের উপর দিয়ে চলে যাওয়ার সময় যুবায়ের (শুরায়ী নেজামী) অনুসারীরা লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। আমাদের গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। এতে ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের ইজতেমা আয়োজক কমিটির মুরব্বি মাওলানা বসির (৫২) ও মাওলানা আতাউর (৫৪)সহ ৫ জন আহত হয়েছেন। পরে আহতদের উদ্ধার করে রাজধানীর উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।'
সাদপন্থীদের মিডিয়া সমন্বয়ক মো. সায়েম বলেন, 'ইজতেমা ময়দান বুঝে নেওয়ার বিষয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে আমরা টঙ্গীতে ফিরছিলাম। এসময় টঙ্গীর স্টেশন রোডে জুবায়ের পন্থীরা আমাদের গাড়ির উপর হামলা করে গাড়ি ভাঙচুর করে পাঁচজনকে আহত করে। তাদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।'
অন্যদিকে, জুবায়ের (শুরায়ী নেজামী) পন্থী ইজতেমা আয়োজক কমিটির মুরব্বি মাহফুজ হান্নান বলেন, 'আজ তারা ইজতেমা ময়দানের বিদেশি মেহমানখানায় প্রবেশের চেষ্টা করেন। তাদের ময়দানে জোড় ইজতেমা আয়োজন করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারা অবৈধভাবে ময়দানে প্রবেশের চেষ্টা করলে আমাদের সাথিরা (জুবায়ের অনুসারী) তাদের প্রতিহত করে।'
এদিকে, শুরায়ী নেজামীর পক্ষে মিডিয়া সমন্বকারী হাবিবুল্লাহ রায়হান সন্ধ্যায় বলেন, 'আজকের সমস্যার সূত্রপাত হয় সাদপন্থীদের নেতা আব্দুল্লাহ মনসুর এর উস্কানিমুলক বক্তব্য থেকে। উনি বলেছেন, সাদ সাহেব কে আসতে না দিলে এ দেশে কোন ইজতেমা করতে দেওয়া হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ক্লিয়ারেন্স না পেলেও তারা টঙ্গির মাঠে জোড় করার ঘোষণা দেন।'
তিনি আরও বলেন, 'আব্দুল্লাহ মনসুরের এই উস্কানিমূলক বক্তব্যর প্রতিবাদ জানাতে তাবলীগের সাথী, মাদ্রাসার বড় ছাত্র ও সাধারণ মানুষ টঙ্গীর মোড়ে আজ অবস্থান নিয়েছিল। এমন সময় সাদপন্থীদের একটি গাড়ি টঙ্গীর মাঠের দিকে যাচ্ছিল। তখন পুলিশ সদস্যরা ও আন্দোলনরত ছাত্ররা বাধা দেয় এবং তাদের গাড়ি এই রাস্তা দিয়ে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। পুলিশ সদস্যরা তাদের গাড়িকে ইউ টার্ন নিতে বলেন। তারা তাদের কথা অমান্য করে ইউটার্ন না নিয়ে, আমাদের সাথী ও আন্দোলনরত মানুষের উপর গাড়ি চালিয়ে দেয়। তখন আত্মরক্ষার্থে এলাকাবাসী ও আম জনতা উত্তেজিত হয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে, এতে সাদপন্থীদের একজন আহত হন।'
গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশন (অপরাধ-দক্ষিণ) মো. হাফিজুল ইসলাম বলেন, 'মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা মহাসড়কে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান নিয়ে ২০১৮ সালে সাদপন্থীদের হামলার বিচারের দাবি জানান। এ সময় তারা সাদ অনুসারীদের একটি প্রাইভেটকারে ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'এ নিয়ে কোনো পক্ষ এখনও অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'