২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পূর্ণাঙ্গ রায়: যথাযথ তদন্ত দরকার জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন হাইকোর্ট
২১ আগস্টের নৃশংস গ্রেনেড হামলার ঘটনায় যথাযথ তদন্ত হওয়া জরুরি এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত বলে পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।
গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামিকে খালাস দেন।
পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ যারা ওই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের ন্যায়বিচার সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হয়েছে।
স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়ে আদালত বলেছেন, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নতুন করে তদন্ত শুরু করা উচিত।
দোষীদের খালাসের রায়ের ভিত্তিতে আদালত মন্তব্য করেন, 'এ মামলার বাস্তবিক দিকগুলো বিবেচনা করলে বলা যায় যে, অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে মূলত অনুমানের ভিত্তিতে, কোনো আইনি বা প্রমাণসাপেক্ষ ভিত্তি ছাড়াই।'
আদালত আরও বলেছেন, আলোচনার পর দেখা গেছে, প্রসিকিউশন এ মামলায় কোনো আসামির উপস্থিতি বা অংশগ্রহণের মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ প্রমাণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ফলে, দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারার অধীনে তাদের দোষী সাব্যস্ত করার ভিত্তি নেই। একইভাবে বিস্ফোরক পদার্থ আইনের ৩, ৪ এবং ৬ ধারার অধীনে আনা অভিযোগও প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি।
রায়ে আরও বলা হয়েছে, 'দ্বিতীয় তদন্ত সঠিকভাবে সম্পন্ন না হওয়ায় এখতিয়ার ছাড়াই বেআইনিভাবে বিচার অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং মামলার যথাযথ বিশ্লেষণ ছাড়াই রায় দেওয়া হয়েছে।'
রায়ে আদালত মন্তব্য করেছেন, বিষয়টির সব দিক বিবেচনা করে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করা এবং তাদের দেওয়া সাজা বেআইনি এবং আইনি ভিত্তিতে টেকসই নয়। তাই এ রায় বাতিল করা হলো।
আদালত মনে করেন, আইনি ভিত্তি ও বাস্তব প্রমাণের অভাবে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। সে অনুযায়ী, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারার অধীনে ডেথ রেফারেন্স প্রত্যাখ্যান করা হলো এবং আপিল গ্রহণ করা হলো।
রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়, 'যেসব আসামির বিরুদ্ধে আপিল করা হয়নি, তাদের ক্ষেত্রেও এ রায় প্রযোজ্য হবে। কারণ, অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করা অবৈধ এবং আইনি ভিত্তিতে টেকসই নয়। তাই রায় ও দণ্ড বাতিল করা হলো এবং যারা কারাগারে রয়েছেন, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।'
আদালত আরও বলেছেন, আমাদের সর্বোচ্চ আদালতের অনেক সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, চার্জশিট গৃহীত হওয়ার পর মামলা পুনরায় খোলা বা নতুন করে তদন্তের জন্য পাঠানো যায় না। তবে, যদি নতুন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়, তদন্ত কর্মকর্তা সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করতে পারেন। তবে আদালতের অনুমতি ছাড়া প্রসিকিউশনকে মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য পাঠানো বেআইনি। এর ফলে বেআইনি ভিত্তিতে মামলার কার্যক্রম এবং পরবর্তী তদন্তের চার্জশিটও আইনি ভিত্তিতে টেকসই নয়।