পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-খুলনা ট্রেন চলাচল শুরু, খুলনায় পৌঁছা যাবে পৌনে ৪ ঘণ্টায়
আজ মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-খুলনা রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
প্রথম ট্রেনটি সকাল ৬টায় খুলনা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। ট্রেনটি সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়। সেখানে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ সেবার উদ্বোধন করেন। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ইয়েন উপস্থিত ছিলেন।
ফাওজুল কবির খান বলেন, 'আজকে আমাদের জন্য একটা আনন্দের দিন। আজ খুলনা থেকে ঢাকায় ট্রেন চালু হচ্ছে পদ্মা রেল সংযোগ দিয়ে। পৌনে চার ঘণ্টায় পৌঁছে যাবে ঢাকায়।'
রেল নিয়ে মানুষের অসন্তোষ আছে, তা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, 'আমাদের লোকোমোটিভ সংকট আছে, কোচ সংকট আছে, লোকবলের সংকট আছে। রেল সীমিত লোকবল দিয়ে কাজ করছে। তবে কেউ তাদের কথা বলে না। আমি বলব, তারা রেলের আনসাং হিরো।'
রেলের বর্তমান দুরবস্থার কারণ অপরিপক্ক ব্যয় বলে উল্লেখ করে ফাওজুল কবির বলেন, 'এর আগে যত্রতত্র স্টেশন করা হয়েছে। কোনোকিছু না জেনেই এগুলো করা হয়েছে। যাত্রীরা আশা করেন রেল তাদের বাড়ির পাশে থামবে। আবার তারা দ্রুততম সময়ে যেতেও চান। স্টেশন বাড়লে ট্রেন থামবে, এতে সময় লাগবে। আমরা আশা করব, যেখানে যাত্রী বেশি হবে সেখানে রেল থামবে।'
রেল একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, 'রেলের আয় দিয়ে ব্যয় নির্বাহ করতে হবে। সব খাতেই ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এটা কত দেওয়া যায়? আমাদের ব্যয়সাশ্রয়ী হতে হবে। আমাদের ব্যয় আশপাশের দেশ থেকে অনেক বেশি। সবাইকে অনুরোধ জানাব, কীভাবে খরচ কমানো যায় তা করতে। এটা হলে সেবা দিতে সক্ষম হবো।'
এদিকে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত মাস্টার মো. আশিকুর রহমান বলেন, এ ট্রেনে মোট আসন রয়েছে ৭৬৮ টি। এরমধ্যে খুলনা থেকে ৫৫৩ জন যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি যাত্রা করেছে। অন্যান্য স্টেশন থেকে বাকি আসনগুলোর টিকিট বুকিং হয়েছে।
তিনি জানান, ঢাকা থেকে রাত ৮ টায় আবার ট্রেনটি ছেড়ে খুলনায় পৌঁছাবে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে। নতুন রুটে ২০৮ কিলোমিটার দূরত্ব খুলনা থেকে যাত্রা শুরু করে যশোরের সিঙ্গিয়া থেকে নড়াইল হয়ে মধুমতি সেতু পার হয়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি, সেখান থেকে ফরিদপুরের ভাঙা হয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ট্রেনটি ঢাকায় যাবে। আবার একই রুট থেকে পুনরায় খুলনায় ফিরবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা-ঢাকা-খুলনা রুটে ''জাহানাবাদ এক্সপ্রেস'' এবং বেনাপোল-ঢাকা-বেনাপোল রুটে ''রূপসী বাংলা'' এক্সপ্রেস সাপ্তাহিক বন্ধের দিন ছাড়া নিয়মিত যাতায়াত করবে। দুটি ট্রেনেরই সাপ্তাহিক বন্ধের দিন থাকবে সোমবার। ট্রেন দুটিতে ১২টি কোচে মোট আসন থাকবে ৭৬৮টি।
নতুন চালু করা এ ট্রেনে মাত্র পৌনে ৪ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে খুলনা অথবা বেনাপোল পৌঁছানো যাবে। বর্তমানে ট্রেনে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল-ঈশ্বরদী হয়ে খুলনা যেতে সময় লাগে সাড়ে ৯ ঘণ্টা এবং রাজবাড়ী হয়ে বেনাপোল যেতে লাগে ৭ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট।
ইতিমধ্যে ট্রেনগুলোর চলাচলের সময়সূচি ও ভাড়া প্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে রেলওয়ে বিভাগ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ডিসেম্বর থেকে খুলনা-ঢাকা-খুলনা রুটে এক জোড়া এবং বেনাপোল-ঢাকা-বেনাপোল রুটে এক জোড়া নতুন আন্তঃনগর ট্রেন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ট্রেন শিডিউল অনুযায়ী, সকাল ৬টায় খুলনা থেকে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস নাম নিয়ে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে; সকাল পৌনে ১০টায় ঢাকায় পৌঁছাবে। সকাল পৌনে ১১টায় ঢাকা থেকে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস নামে বেনাপোলের উদ্দেশে যাত্রা করবে; যশোর জংশন হয়ে দুপুর আড়াইটায় বেনাপোলে পৌঁছাবে।
রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস বিকেল সাড়ে ৩টায় বেনাপোল থেকে যাত্রা করে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে। এরপর ট্রেনটি জাহানাবাদ এক্সপ্রেস নাম নিয়ে ঢাকা থেকে রাত ৮টায় যাত্রা করে রাত ১১টা ৪০ মিনিটে খুলনায় পৌঁছাবে।
এদিকে খুলনা-ঢাকার নতুন রুটের ট্রেনের ভাড়াও (ভ্যাট ছাড়া) নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে বিভাগ।
ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত ভাড়া পড়বে শোভন চেয়ার ৪৪৫ টাকা, স্নিগ্ধা ৭৪০ টাকা, এসি সিট ৮৮৫ টাকা ও এসি বার্থের ভাড়া ১ হাজার ৩৩০ টাকা। সব শ্রেণির ভাড়ার সঙ্গে সরকারনির্ধারিত ভ্যাট যুক্ত হবে।