জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে ‘৭২ এর মুজিববাদী সংবিধানকে কবরস্থ’ করা হবে: হাসনাত
আগামী ৩১ ডিসেম্বর জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে এবং 'নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে' বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করা হবে বলে আশা করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আগামী ৩১ ডিসেম্বর বেলা ৩টায় জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র ঘোষণা করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যা সামনে রেখে আজ রোববার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে বাংলামোটরে নিজেদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এ কথা বলেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, 'আমরা চাই, মুজিববাদী সংবিধানকে কবরস্থ ঘোষণা করা হবে। যেখান থেকে এক দফার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, ঠিক সেই জায়গা থেকে মুজিববাদী বাহাত্তরের সংবিধানের কবর রচিত হবে৷আমরা প্রত্যাশা রাখছি, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করা হবে।'
তিনি বলেন, 'এই ঘোষণাপত্র ৫ আগস্টেই হওয়া উচিত ছিল, না হওয়ার ফলে ফ্যাসিবাদের পক্ষের শক্তিগুলো ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে। দুই হাজারের ঊর্ধ্বে শহীদ এবং ২০ হাজারের ঊর্ধ্বে আহতদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে তারা এই আন্দোলনের লেজিটেমেসিকে (বৈধতাকে) প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।'
হাসনাত বলেন, 'জুলাই অভ্যুত্থান, যে গণঅভ্যুত্থানটি হয়েছে... তার মধ্য দিয়ে মানুষ মুজিববাদী সংবিধানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এই যে মানুষ মুজিববাদী সংবিধানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, তার একটি লিগ্যাল ডকুমেন্টেশন থাকা উচিত।'
তিনি আরো বলেন, 'সে জায়গা থেকে ৩১ ডিসেম্বর ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে... ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান ঘিরে আমাদের যে গণ-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, '৭২ এর সংবিধানের বিপরীতে গিয়ে মানুষ যে রাস্তায় নেমে এসেছে এ অভ্যুত্থানে- সেটির প্রাতিষ্ঠানিক, দালিলিক স্বীকৃতি ঘোষণা করার জন্য আমরা ৩১ ডিসেম্বর ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে শহীদমিনার থেকে আমাদের প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন ঘোষণা করব।'
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও বর্তমানে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, 'আমরা বিপ্লবের একটিমাত্র ধাপ অতিক্রম করেছি৷ জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র আরও আগে ঘোষণা করা প্রয়োজন ছিল। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের এই বিপ্লব যেমন ফ্যাসিস্টবিরোধী সবাইকে ধারণ করতে পেরেছিল, এই ঘোষণাপত্রও সবার আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে পারবে।'
এর মধ্যে ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া করা হয়েছে বলে জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, 'এই বিপ্লবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-মত, ধর্ম ও বয়সের যে মানুষেরা সরাসরি অংশ নিয়েছেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে তাঁদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। এটি সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করা হচ্ছে।'
বক্তব্যের পর উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। এসময় এক প্রশ্নের জবাবে হাসনাত বলেন, 'বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতিগুলোর মাধ্যমে ভারতীয় আগ্রাসনের ইনস্টলমেন্ট হয়েছে। ঘোষণাপত্রে স্পষ্ট করা হবে, মুজিববাদী সংবিধান কীভাবে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষাকে বিনষ্ট করেছে এবং ঠিক কীভাবে আমরা এটার রিপ্লেসমেন্ট করতে চাই।...সেকেন্ড রিপাবলিক আইনগত বিষয়। এখন এই বিষয়গুলোর দিকে আমরা যাচ্ছি না।'
এ সময় হাসনাতের পাশে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমরা জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র ঘোষণা করব। সেটা সংবিধানে যুক্ত করে সেকেন্ড রিপাবলিক করার দায়িত্ব সরকারের।'