এবারের স্নাতক ভর্তি থেকেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পোষ্য কোটা বাতিল হবে: উপাচার্য
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, '২০২৪-২৫ (স্নাতক) শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পোষ্য কোটা সম্পূর্ণরুপে বাতিল করা হবে। তবে সেটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করার জন্য কয়েকদিন সময় লাগবে। পরবর্তীতে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
আজ বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) রাতে তিনি এ কথা জানান।
এর আগে রাত সাড়ে ৯টার দিকে আলোচনার জন্য উপাচার্য প্রফেসর ড. সালেহ হাসান নকীব তার বাসভবন থেকে ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম কনকসহ আলোচনার জন্য প্রশাসন ভবনে প্রবেশ করেন। প্রশাসন ভবনে আগে থেকেই অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন দুই উপ-উপাচার্য। এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সালাউদ্দিন উদ্দিন আম্মারসহ আন্দোলনরত কয়েকজন প্রতিনিধি প্রশাসন ভবনে প্রবেশ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আজ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় ১০ ঘন্টা ধরে অবরুদ্ধ আছেন দু'জন উপ-উপচার্য, প্রক্টর, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ট্রেজারারসহ অন্তত দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। এর মধ্যে অন্তত ২০ থেকে ৩০ জন নারী রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন মজুমদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীরা কোনো কর্মচারীকে ভবন থেকে বের হতে দেয়নি।
প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বরাতে আমাদের সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা না খেয়ে ভেতরে আটকে থাকার কারণে কয়েকজন কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে অবরুদ্ধরা রড দিয়ে তালা ভাঙার চেষ্টা করলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বাধা দেয়, শুরু হয় তর্কবির্তক, হট্টগোল। দুই পক্ষের বিরোধে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসে।
মো. আখতার হোসেন মজুমদার আরও বলেন, 'প্রশাসনিক ভবনের গেটে তালা দেওয়ায় কাউকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। বের হতে না দেওয়ায় দুপুরের খাবারও কেউ খেতে পাননি। আমাদের ভেতরের ডায়াবেটিস, প্রেশারের রোগীও আছে। তারা আন্দোলন করছে, অথচ তাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা কোটা ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশে নিয়ে এসেছি।'
এর আগে, আজ সকাল ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে তালা দেয়।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারসহ আন্দোলনকারী কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানা যায়। সারাদিন প্রশাসন ভবনের সামনের গেটে অবস্থান নেওয়ায় ও না খেয়ে থাকায় তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
তিনি আরও বলেন, 'শিক্ষক কর্মকর্তাদের জন্য কোনো পোষ্য কোটা রাখা হয়নি। শুধুমাত্র সহায়ক কর্মচারীদের জন্য পোষ্য কোটা ১ শতাংশ রাখা হয়েছে, তা-ও মানবিক কারণে। সেখানে তাদের এ ধরনের আন্দোলন কতটা যৌক্তিক?'
সন্ধ্যা ৭টায় রাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, 'পোষ্য কোটা বাতিল না করা পর্যন্ত কাউকে ভেতর থেকে বের হতে দেওয়া হবে না। শুরুতেই তাদের আহ্বান করেছিলাম প্রশাসন ভবনের ভেতরে না থাকতে কিন্তু তারা তা শোনেননি।'
তিনি বলেন, 'সম্পূর্ণ কোটা বাতিল করা না হলে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলানোর পাশাপাশি আগামী রোববার থেকে পুরো ক্যাম্পাস অচল করে দেওয়া হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বাইরে আছেন, তিনি চাইলে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এখন ভেতরে ঢুকতে পারবেন। কিন্তু পোষ্য কোটা বাতিল না করে বের হতে পারবেন না।'
এর আগে গতকাল বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ শাখা থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য নির্ধারিত পোষ্য কোটা ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশে রাখার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
পোষ্য কোটা ১ শতাংশ রাখার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান জানিয়ে রাবির প্রশাসনিক ভবনে অনির্দিষ্টকালের জন্য তালা দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে গতকাল বুধবার রাতে জরুরি ভিত্তিতে প্রেস ব্রিফিং করে এ সিদ্ধান্ত জানান রাবির শিক্ষার্থীরা।
প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, 'জুলাই বিপ্লবের মেইন মেন্ডেট ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার। কিন্তু বিপ্লব পরবর্তী কোটার যৌক্তিক সংস্কারতো হয়নি, বরং একটি অযৌক্তিক, অবৈধ কোটা এখনও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রেখে ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তার পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিগত ১ মাস যাবত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে এবং প্রশাসনকে সময় দিয়েছে।'
উল্লেখ্য, গত একমাস ধরে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও অবস্থান নিষিদ্ধ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে পরিচয়পত্র সার্বক্ষণিক সঙ্গে রাখার নির্দেশ দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার বিকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. মাহবুবর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়োছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, 'আইন-শৃঙ্খলার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'