জমি নিয়ে বিরোধ: ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাঁওতাল নারীকে মারধর, বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে এক সাঁওতাল নারীকে মারধর ও তার বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
গতকাল শুক্রবার সকালে ওই নারী মারধরের শিকার হন। পরে রাতে উপজেলার শাখাহার ইউনিয়নের রাজাবিরাট এলাকার বরট্ট গ্রামে তার বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী নারী ফিলোমিনা হাসদা (৫৫) বর্তমানে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে তার পরিবার সদস্যরা জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম গোবিন্দগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য ও রাজাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, 'সার্বিকভাবে দেশে খারাপ সময় যাচ্ছে। এ কারণে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে তারা সুযোগ নিচ্ছে ।'
ফিলোমিনা হাসদার ছেলে ব্রিটিশ সরেনের অভিযোগ, শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে গ্রামের পাশে সাঁওতালদের পৈত্রিক জমিতে মাটি ভরাট করছিলেন রফিকুল ইসলাম। মাটি ভরাট করতে দেখে বাধা দিতে যান গ্রামের কয়েকজন সাঁওতাল যুবক। তখন চেয়ারম্যান ও তার অনুসারীরা নিকোলাস মুর্মু নামে এক যুবককে মারধর করে তাড়িয়ে দেন। কিছু দূরেই আলুর ক্ষেতে কাজ করছিলেন তার খালাত ভাই ব্রিটিশ সরেন। মারধরের কথা শুনে তিনি প্রতিবাদ করতে গেলে চেয়ারম্যান তাকেও লাঠিপেটা করেন। এ সময় তার মা ফিলোমিনা হাসদা বাধা দিতে গেলে তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন রফিকুল ইসলাম। এতে ফিলোমিনা মাটিতে পরে যান এবং তার কান দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে।
পরে সকালে সাড়ে ১১টার দিকে ব্রিটিশ সরেনের ভাইয়েরা তার মাকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। দুপুর ১২টার দিকে ব্রিটিশ সরেন আবার আলুর ক্ষেতে গেলে চেয়ারম্যানের অনুসারী ২০-২৫ তাকে বাড়ি পর্যন্ত ধাওয়া করে এবং হুমকি দিয়ে চলে যায় বলেও অভিযোগ করেন ব্রিটিশ সরেন।
ব্রিটিশ সরেন জানান, বিকেলে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে তার মাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি জানান, মায়ের সঙ্গে হাসপাতালে থাকা অবস্থায় রাত ১১টার দিকে তিনি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা জানতে পারেন। আগুনে তাদের একটি ঘর পুড়ে গেছে।
তার অভিযোগ- রফিকুল ইসলামের অনুসারীরা এ ঘটনায় জড়িত।
জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মালেকের কাছ থেকে ২০০১ সালে ওই ১৬ শতক জমি আমি কিনেছি। আমার নামে খাজনা-খারিজ সব আছে। আমি কেন তাদের মারধর করতে যাব? আর আগুন লাগানোর কোনো ঘটনাই বা কেন ঘটনা? এসব বিষয়ে আমাদের বিন্দুমাত্র কোনো সম্পৃক্ততা নেই।'
গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম বলেন, 'এক সাঁওতাল নারীকে মারধরের ঘটনা শুনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'