নারায়নগঞ্জের জন্য মৃত্যুকে বরণ করতে রাজি আছি: আইভী
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ১ লাখেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে নির্বাচনে জয়ী হবেন বলে আস্থা প্রকাশ করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে (নাসিক) মেয়র নির্বাচনের প্রচারণার শেষ দিন ছিল শুক্রবার। শেষ দিনে বিকেলে শহরের প্রাণকেন্দ্র দুই নাম্বার গেটে বিশাল সমাবেশ করেন আইভী।
সমাবেশে আইভী বলেন, "যেকোনো সময় আমার জীবনে কিছু একটা ঘটতে পারে। আমি আপনাদের সেবায় জীবন বাজি রেখেছি। আমি এই নারায়ণগঞ্জের জন্য মৃত্যুকে বরণ করতে রাজি আছি।"
বিগত দুই নির্বাচনে জয়লাভের কথা উল্লেখ করে তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান। আইভী বলেন, "আপনারা আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছেন। আবারো আমি এসেছি মানুষের সেবা করার জন্য এবং দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য।"
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, "আমাকে পরাজিত করতে অনেক পক্ষ কাজ করছে। কীভাবে আমাকে পরাজিত করা যায় তার চেষ্টা করছে অনেকেই। তবে সবাই জানে আমার বিজয় সুনিশ্চিত।"
বিগত পাঁচ বছরে নারায়ণগঞ্জের অভূতপূর্ণ উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা তিনি নিশ্চয়ই বজায় রাখবেন বলে জানান আইভী।
"১৬ তারিখের নির্বাচনে আমাদের বিজয় হবে সুনিশ্চিত," যোগ করেন তিনি।
সমাবেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতারা যোগ দেন। তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নারায়ঙ্গঞ্জ নির্বাচন পর্যালোচনার দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক।
তিনি বলেন, "আইভী হঠাৎ করে আসা কেউ নয়। অন্তিম পরীক্ষায় পরীক্ষিত তিনি। নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ও শান্তির পক্ষে সে দাঁড়িয়েছে। তাই নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের জন্য আইভীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করুন।"
প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে নানক বলেন, "প্রধানমন্ত্রী আমাকে পাঠিয়েছেন এটা বলার জন্য যে, সেলিনা হায়াৎ আইভী যদি নারায়ণগঞ্জের মেয়র নির্বাচিত হয় তাহলে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর।"
নির্বাচনের সময় নেতাকর্মীরা যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষা করে, সেটিও বলেন তিনি।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, "কেউ কেউ অশান্তির সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে। আমরা প্রশাসনকে গতকাল বলে এসেছি কোনো বিশৃঙ্খলা এই নারায়ণগঞ্জ হতে পারবে না। নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো সন্ত্রাসী উঁকিঝুঁকি আমরা মানবো না।"
সমাবেশ শেষে কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে নারায়ণগঞ্জে দুই নাম্বার গেট থেকে মিছিল বের করে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিসে এসে শেষ হয়।
এদিকে স্থানীয় ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রচারণায় দিক থেকে নৌকা এগিয়ে থাকলেও, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে হাতি মার্কা নিয়ে নির্বাচনে নামা স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুরের সাথে।
ভোটাররা মনে করছেন অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের নামে শহরে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর কারণে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে আইভীকে।
নারায়ণগঞ্জ বন্দর এলাকার বাসিন্দা কাপড়ের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, "আইভী অনেক কাজ করেছেন, শহরে অনেক উন্নয়ন করেছেন। কিন্তু কোনো ধরনের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে শহরের সকল হকার এবং বস্তি উচ্ছেদ করা একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছুই নয়। এর ফলে সে অনেক ভোট হারাবে বলে মনে করছি।"
"কিন্তু তৈমুর ব্যক্তি হিসেবে অত্যন্ত ভালো মানুষ। বিগত দিনে জনপ্রতিনিধি না থাকলেও যে কোনো বিপদে মানুষ তাকে পাশে পেয়েছে," যোগ করেন তিনি।
ফলে তাদের মধ্যে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি। আইভী জিতলেও তার ব্যবধান হবে খুবই কম।
তবে শহরে কোন ধরনের চাঁদাবাজি না থাকায় ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা আইভীর উপর খুশি।
ফুটপাতে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আসাদ বলেন, "আমরা কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়া ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছি। তাছাড়া শহর উন্নয়নে আইভী অনেক কাজ করেছেন। আমরা তাকে চাই।"
নিতাইগঞ্জের ব্যবসায়ী স্বপন সাহা বলেন, "আইভী এতদিন মেয়র ছিলেন এবং অনেক উন্নয়ন করেছেন। তিনি যদি আবার মেয়র হন তাহলে উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া আমরাও শান্তিতে ব্যবসা করতে পারছি। তাই আমরা তাকে ভোট দেবো।"
এদিকে নির্বাচন উৎসবমুখর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আইভী। তিনি বলেন, "নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন বরাবরই সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর হয়।"
বিগত দিনের থেকে এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "সবগুলো নির্বাচনই চ্যালেঞ্জিং ছিল। এই নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ একটু বেশি।" এর পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে বলে জানান তিনি।
নির্বাচনে সহিংসতার সম্ভাবনা আছে কি না, এর জবাবে আইভী বলেন, "সহিংসতা হলে আমারই ক্ষতি হবে বেশি। আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছি। তারা যেন সজাগ থাকে সেটা বলেছি।"
কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচন প্রভাবিত করার জন্য এখানে আসছে, এমন অভিযোগের জবাবে আইভী বলে, "ঢাকা থেকে নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণে তারা এসেছে। এখানে কোনো ঝামেলা হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করছে। তারা আমার জয় নিয়ে শঙ্কিত নয়, কখনো ছিল না। তাই প্রভাবিত করার কিছু নেই।"
শহর নিয়ে পরিকল্পনার সম্পর্কে আইভির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "ইট-পাথরের এই শহরকে সবুজায়ন করার চেষ্টা করছি আমি। সামনে একে আরও সুন্দর করে গড়ে তোলার চেষ্টা থাকবে।"