দেশের ইতিহাসে ভোজ্যতেলের দাম সর্বোচ্চ
দেশের ইতিহাসে ভোজ্যতেলের দাম এখন সর্বোচ্চ। দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে প্রতিমণ (৩৭.৩২ কেজি) সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৮০০ টাকায়। ২০১৯ সালেও এর মূল্য ছিল প্রায় ৩ হাজার ৮০০ টাকা। তিন বছরে মণপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ২ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, গত তিন বছরে পাম অয়েলের দাম প্রতিমণে ৩ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর বর্তমান বাজার মূল্য ৫ হাজার ৪০০ টাকা, যা ২০১৯ ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা।
আন্তর্জাতিক বাজারে মূল বৃদ্ধির কারণে ভোজ্যতেলের খুচরা বাজারও স্থিতিশীল ছিল না গত দুই বছর। মহামারির কারণে উৎপাদন হ্রাসের পাশিপাশি ডলারের দামও বেড়েছে। অস্থিরতার কারণে দুই বছরে অন্তত ৮ দফা দাম বাড়ানো হয়েছে ভোজ্যতেলের।
চট্টগ্রাম চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো সমাধান নয়। আমদানির সঙ্গে আনুষাঙ্গিক খরচ কমাতে পারে সরকার। বড় আকারের আমদানির জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে ভর্তুকিও দিতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "তেলের বিশ্ব বাজার অস্থির থাকায় আমদানিকারকরা সংশয়ে আছেন। তারা লোকসানের সম্ভাবনায় কিছুটা কম আমদানি করছেন। চাহিদার তুলনায় আমদানি কম থাকায় ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।"
আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারের তথ্যমতে, গত বছরের জুন মাসে পাইকারি বাজারে মণপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৪ হাজার ৩০০ থেকে ৪ হাজার ৪০০ টাকা। পরবর্তীতে দাম বেড়ে সেপ্টেম্বরে পৌঁছায় ৫ হাজার টাকায় এবং নভেম্বরে পৌঁছায় ৫ হাজার ৫০০ টাকায়, যা ২০১৯ সালে ছিল ৩ হাজার ৮০০ টাকা। তিন বছরে দাম বেড়েছে ৬৬.৬৬ শতাংশ।
বর্তমানে বিশ্ব বাজারে টন প্রতি অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ১ হাজার ৫৪০ ডলার। গত বছরের জুন মাসেও তা ছিল ১ হাজার ৫১৮ ডলার। ২০১৯ সালে টন প্রতি অপরিশোধিত ভোজ্যতেলের দাম ছিল প্রায় ৭৪৮ ডলার। বিশ্ব বাজারে ভোজ্য তেলের দামের পাশাপাশি ডলারের মূল্য বেড়েছে। আর এর প্রভাব পড়েছে দেশীয় বাজারেও। মূলত ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয় সয়াবিন তেল।
তুলনামূলক কম দামের কারণে দেশে সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে পাম অয়েল ব্যবহার করা হয়। ভোজ্যতেল ছা্ড়াও ডালডা, খাদ্য ও প্রসাধনীর কাঁচামাল হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে পাম অয়েল। এর মূল উৎপাদক দেশে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া। সেখান থেকেই এই তেল আমদানি করা হয়। গত বছরের জুন মাসে দেশীয় বাজারে মণপ্রতি পাম অয়েলের দাম ছিল ৪ হাজার ২০০ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে এর দাম কিছুটা কমে ৩ হাজার ৬০০ টাকায় নেমে আসে। তবে নভেম্বরে আবার বেড়ে ৪ হাজার ৩০০ থেকে ৪ হাজার ৪০০ টাকায় পৌঁছায়। অথচ ২০১৯ সালেও এর দাম ছিল ২ হাজার ৪০০ টাকা। সেই হিসেবে তিন বছরে দাম বেড়েছে ১২৫ শতাংশ।
বর্তমানে বিশ্ব বাজারে টন প্রতি অপরিশোধিত পাম তেলের দাম ১ হাজার ৪০০ ডলার। গত বছরের জুন মাসেও ছিল ১ হাজার ০৪ ডলার। ২০১৯ সালে এর দাম ছিল মাত্র ৫৮৫ ডলার।
দেড় বছর ধরে অস্থিতিশীল দেশের খুচরা বাজার
বর্তমানে বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৩৬ টাকা, বোতলজাত প্রতি লিটার ১৬০ টাকা, বোতলজাত ৫ লিটারের মূল্য ৭৬০ টাকা এবং প্রতি লিটার পাম অয়েল ১১৯ টাকা। গত বছরের ২০ অক্টোবর থেকে এ দাম সরকার নির্ধারণ করে দেয়।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ছিল ৮০ টাকা। এছাড়া বোতলজাত সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১২৫ টাকা, পাম অয়েলের দাম ৭০ টাকা এবং বোতলজাত ৫ লিটারের মূল্য ছিল ৬২০ টাকা। সেই হিসেবে দুই বছরে সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম বেড়েছে ৭০ শতাংশ।
গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি খোলা সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১১৫ টাকা, বোতলজাত প্রতি লিটার ১৩৫ টাকা, পাম অয়েল ১০৪ টাকা এবং বোতলজাত ৫ লিটারের মূল্য ৬৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। ওই বছরের ২৯ মে আরেক দফা দাম বাড়িয়ে খোলা সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১২৯ টাকা, বোতলজাত প্রতি লিটার ১৫৩ টাকা, পাম অয়েল ১১৬ টাকা এবং বোতলজাত ৫ লিটারের মূল্য ৭২৮ টাকায় নির্ধারণ করা হয়।
এর আগে ২০১২ সালে বিশ্ব বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির রেকর্ড হয়েছিল। অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম টনপ্রতি ১ হাজার ৪০০ ডলার ছিল। তখন সয়াবিন তেল লিটার প্রতি সর্বোচ্চ ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়।
উল্লেখ্য, দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২০ লাখ মেট্রিক টন। এর প্রায় ৯০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।