এআইআইবির ঋণ প্রবাহে বড় অগ্রগতি
আগামী তিন বছরে ১৪ প্রকল্পে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক বা এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) কাছ থেকে প্রায় ৩.৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাবে বলে আশা করছে সরকার। এসব প্রকল্প ছাড়াও অন্য একটি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ও এআইআইবি যৌথভাবে ২.৩ বিলিয়ন ডলার ঋণের আশ্বাস দিয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, যাত্রা শুরুর পর থেকে এশিয়াভিত্তিক এ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বাংলাদেশে তাদের ঋণ প্রবাহ পর্যায়ক্রমে বাড়াচ্ছে। ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু হওয়া এই ব্যাংকের কাছ থেকে ১৩ প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ২.৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। আগামী দুই বছরের মধ্যে এই সংস্থার কাছ থেকে দ্বিগুণের বেশি ঋণ পাওয়া যাবে।
ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ড. পিয়ার মোহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়নে বড় অংশীদার হতে যাচ্ছে এআইআইবি। বাংলাদেশকে এখন সর্বোচ্চ ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক বা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো। আগামীতে বাংলাদেশে ঋণ প্রবাহের ক্ষেত্রে এসব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার পর্যায়ে চলে যেতে পারে এআইআইবি। এর ফলে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন আরো জোরদার হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও বাড়বে।
ইআরডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে ইআরডির যে বরোয়িং প্রগ্রাম রয়েছে, তাতে ১৯ প্রকল্পে ঋণ ও অনুদান মিলিয়ে এডিবির কাছ থেকে ৩.৩৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের আশ্বাস রয়েছে, যা এআইআইবির চেয়ে কম।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এআইআইবি শুধু অবকাঠামো খাতেই ঋণ দেয়। ফলে এআইআইবির ঋণের প্রবাহ বাড়লে অবকাঠামো খাতে উন্নয়নও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হয়ে যাবে, তখন নমনীয় ঋণ পাওয়ার সুযোগও কমবে। এ কারণে অবকাঠামো খাতে এআইআইবির ঋণ নিয়ে অবকাঠামো খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সুযোগ রয়েছে। তবে এসব ঋণের সঠিক ব্যবহারও করতে হবে। দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বৈদেশিক ঋণ ব্যবহারের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে।
এদিকে চলতি অর্থবছরে কোভিডের টিকা কিনতে সরকারকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে এআইআইবি। এআইআইবির সঙ্গে সরকারের এ সংক্রান্ত ঋণ চুক্তি আগামী মার্চের মধ্যে সই হওয়ার কথা রয়েছে। সরকারের প্রয়োজন হলে চলতি অর্থবছরে এআইআইবি বাজেট সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি সরকারকে জানানো হয়েছে বলে জানায় ইআরডি।
নদীকেন্দ্রিক বড় বিনিয়োগ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে এআইআইবি
'ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর টেকসই ব্যবস্থাপনা' শীর্ষক প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে অর্থায়ন করবে এআইআইবি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার দুই পাশে ভূমি উদ্ধার এবং অর্থনৈতিক করিডোর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রাথমিক হিসাবে এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২.8 বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণের প্রস্তাব করা হয়েছে ২.৩ বিলিয়ন ডলার।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ করছে বিশ্বব্যাংক। সমীক্ষার কাজ শেষ হলে এ প্রকল্পের প্রকৃত ব্যয় জানা যাবে। এরপর কোনো উন্নয়ন সহযোগী কি পরিমাণ অর্থায়ন করবে তা নির্ধারণ করা হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে গুরুত্ব দিচ্ছে এডিবি
সংশ্লিষ্টরা জানান, এখনও পর্যন্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে এআইআইবি।
এই ধারাবাহিকতায় এআইআইবির অর্থায়নে আরো ছয় প্রকল্পে ঋণের আশ্বাস দিয়েছে এশিয়াভিত্তিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটি।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হলো: মদুনাঘাট-ভুলতা ৭৬৫ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন, বিআরইবি নেটওয়ার্কের (রাজশাহী-রংপুর) আধুনিকীকরণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং গ্যাস সেক্টরের জ্বালানি দক্ষতার উন্নতি সাধন।
অবকাঠামো খাত
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, এআইআইবি, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) 'মাল্টি-সেক্টর অন লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি' প্রকল্পে অর্থায়ন করবে। সংস্থাটি এ প্রকল্পে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে।
আগামী এপ্রিলে সরকার ও এআইআইবির মধ্যে এ সংক্রান্ত ঋণ চুক্তি সই হতে পারে।
প্রকল্পটির উদ্দেশ্য, বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন প্রদানের মাধ্যমে অবকাঠামো বিনিয়োগ উন্নীতকরণ।
এছাড়া পুরনো ঢাকার অবকাঠামো উন্নয়নের একটি প্রকল্পে অর্থায়ন করবে এ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটি।