৯ বছরেও ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেনি রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকরা
সাভারের রানা প্লাজা ট্রাজেডির দীর্ঘ ৯ বছর পার হলেও এখনো সেই ভয়াবহ স্মৃতি ভুলতে পারেননি রানা প্লাজায় আহত শ্রমিক ও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পরিবার। দীর্ঘ ৯ বছর পরে এসেও সেই ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।
আহতদের অনেকেই চিকিৎসার অভাবে এবং প্রচণ্ড অর্থকষ্টে জীবনযাপন করছেন; এছাড়াও সেই ট্রাজেডিতে আহত শ্রমিকদের মধ্যে পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসার অভাবসহ নানা কারণে মারা গেছেন অন্তত ৫ জন শ্রমিক, বলছিলেন রানা প্লাজার আহত শ্রমিকদের সংগঠন রানা প্লাজা সার্ভাইভারস এসোসিয়েশনের সভাপতি ও আহত শ্রমিক মাহমুদুল হাসান হৃদয়।
রানা প্লাজায় আহত শ্রমিক নিলুফার বেগম জানান, তিনি রানা প্লাজার ৫ম তলায় প্যানটম এপারেলসে কাজ করতেন। ঘটনার সাড়ে ৯ ঘণ্টা পর উদ্ধারকর্মীরা তাকে উদ্ধার করেন। রানা প্লাজা ধসে তিনি ডান পায়ে ও মেরুদন্ডে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়েও এখনো সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি, এমনকি তার ডান পা-টি এখনো অচল। এছাড়াও মেরুদন্ডে আঘাতজনিত কারণে কিডনিতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে তার।
নিলুফার বলেন, "রানা প্লাজা ধসের পর থেকে আমি কোন কাজ করতে পারিনা। একারণে আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। বর্তমানে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছি, অর্থাভাবে করাতে পারছিনা নিজের চিকিৎসাও।"
রানা প্লাজায় নিহত শ্রমিক রাব্বি হোসেনের মা রাহেলা খাতুন বলেন, "প্রতি বছর বিভিন্ন দিবসে ছেলের কথা মনে হলেই রানা প্লাজার সামনে আসি। মনে হয় এখানেই আমার ছেলে আছে, আমাকে দেখছে আর আর্তনাদ করছে।"
তিনি বলেন, "ছেলেকে হারালাম আজ ৯ বছর, কিন্তু ছেলে হত্যার বিচার আজও পাইনি। রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ সকল হত্যাকারীরা এখনও বিচারের আওতায় আসেনি। রানা জেলে থাকলেও আসামীদের অনেকেই জামিনে রয়েছে, বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে। আমি আমার ছেলে হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানাই, দোষীদের ফাঁসি চাই।"
এদিকে রানা প্লাজার ৯ বছর পূর্তি উপলক্ষে শনিবার বিকালে রানা প্লাজার সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে একাধিক শ্রমিক সংগঠন। নিহতদের স্বরণে প্লাজার অস্থায়ী বেদিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেন তারা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, "আমরা প্রতিবছরই এই দিনে নিহতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করি। এছাড়া আমাদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরি। আজকে আমাদের দাবি ছিল, ২৪শে এপ্রিলকে জাতীয়ভাবে পোশাক শিল্পের শ্রমিক শোক দিবস ঘোষণা করা। এছাড়াও রানা প্লাজার সামনে স্থায়ীভাবে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের এক জীবনের আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ, আহত ও নিহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন, দোষীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, রানা প্লাজার জমি অধিগ্রহণ করে শ্রমিকদের পুনবার্সন করার ব্যবস্থা করা।"
তিনি বলেন, "দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা এই দাবিগুলো প্রতি বছরই তুলে ধরি, কিন্তু আজ পর্যন্ত আমাদের একটি দাবিও পূরণ হয়নি।"
রানা প্লাজা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও আহত শ্রমিক এমদাদুল হক বলেন, "তবু আমাদের দাবিগুলো সরকার খুব দ্রুত পূরণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।"
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে ১১৩৮ জন নিহত এবং ২৪৮ জন আহত হন।