প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে পরিকল্পনা নিতে সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ
অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, দেশের পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে যথাযথ পরিকল্পনা নিতে সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে।
তিনি বলেন, 'দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য যে ধরনের উন্নয়নের ধ্যান-ধারণা নেওয়া উচিত ছিল, সরকারের পক্ষ থেকে সেদিকে মনোযোগ দেওয়া হয়নি বলেই তারা এখনো সাধারণ নাগরিকদের চেয়ে পিছিয়ে। এখানে সরকারের ব্যর্থতা আছে বলে অমি মনে করি।'
'প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে উন্নয়নের ধ্যান-ধারনা ঠিকমতো পৌঁছে দেওয়া হয়নি, শুধু তা-ই নয়, বরং তাদের জীবন-জীবিকার উপযোগী যে ধ্যান-ধারণাগুলো ঈষৎ পরির্তন করে দেওয়ার কথা ছিল, সরকারের পক্ষ থেকে সেভাবে চিন্তাও করা হয়নি। বাংলাদেশের উন্নয়নে অনেক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, কিন্তু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়নে পরিকল্পনা না নিয়ে উল্টো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে।'
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, অথচ আমরা একদিকে প্রতিবেশ-পরিবেশ রক্ষার কথা বলি। বন, নদী, পাহাড়—এগুলো সংরক্ষণের কথা বলি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষের জীবন-জীবিকা এগুলোর সঙ্গে অনেকাংশে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশের উন্নয়নের ধ্যান-ধারণায় এখন থেকে আরও অনেক বেশি পরিবশ সংরক্ষণের বিষয়টি আছে। এবং সেটার সাথে এই জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা ওতপ্রোতেভাবে জড়িত।
তিনি বলেন, 'আমরা যে এসডিজির লক্ষ্য পূরণের কথা বলছি, সেখানে পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্বপুর্ণ।'
তাই সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লোকজনের—অর্থাৎ চা শ্রমিক, দলিত, হরিজন, ঋষি সম্প্রদায় ও তৃতীয় লিঙ্গসহ সবার জীবনমান উন্নয়নের জন্য সঠিকভাবে পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান এই অর্থনীতিবিদ।
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ব্রাত্যজন রিসোর্স সেন্টারের (বিআরসি) অনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশের প্রান্তিক ও বাদ-পড়া জনগোষ্ঠীসমূহের কল্যাণে নিবেদিত দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠান ব্রাত্যজন রিসোর্স সেন্টার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করল।
সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড), পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রান্তিক ও বাদ-পড়া, হতদরিদ্র, সীমাহীন সমস্যা ও দুর্ভোগে জর্জরিত, অদৃশ্য ও পিছনে পড়ে থাকা জনগোষ্ঠীসমূহ নিয়ে কাজ করছে।
এই দুটি সংগঠনের উদ্যোগে যাত্র শুরু করেছে বিআরসি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সেড-এর পরিচালক ফিলিপ গেইন বলেন, 'সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট যাত্রা শুরু করেছিল ১৯৯৩ সালে। আজকে যে রিসোর্স সেন্টারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু, তার কাজ তখন শুরু হয়েছিল। অর্থাৎ যে প্রান্তিক ও সামাজিক সম্পর্ক থেকে বাদ পড়া মানুষদের জন্য এই ব্রাত্যজন রিসোর্স সেন্টার, তাদের নিয়ে সেড কাজ শুরু করেছিল সেই ১৯৯৩ সালে। পার্থক্য হলো তখন আমরা কাজ শুরু করেছিলাম আদিবাসী জাতিসত্তাসমূহ, অরণ্যচারী মানুষ, বন বিনাশের নানা বিষয় ও পরিবেশ নিয়ে। পরবর্তীতে আমাদের চিন্তার ও কাজের পরিধি বেড়েছে। আমরা সেড থেকে পরবর্তীতে চা শ্রমিক ও যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করতে থাকি। তবে গত দশ বছরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসমূহ থেকে বেদে, হরিজন, ঋষি, কায়পুত্র, জলদাস, বিহারি জনগোষ্ঠী যুক্ত হয় । এরা সব মিলিয়ে ছয় মিলিয়ন বা ষাট লাখ মানুষ। এদেরকেই আমরা বলছি ব্রাত্যজন।'
ব্র্যাক বাংলাদেশের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে কানাডার হাই কমিশনার ড. লিলি নিকোলস, বাংলাদেশে ইইউ-এর ডেলিগেশনের ডেপুটি হেড অভ মিশন জেরেমি ওপ্রিটেসকো। নিজেরা করি-র সমন্বয়ক খুশি কবির, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ও আজকের পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক গোলাম রহমান প্রমুখ। সারা দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।