উদ্বোধনের মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত...
নিজস্ব অর্থায়নে দেশের বৃহত্তম মেগা প্রকল্প পদ্মা বহুমুখী সেতুর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আজ। জমকালো এই উদ্বোধন উদযাপনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার (২৫ জুন) সকাল ১১টায় মাওয়া পয়েন্টে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন।
এছাড়া, দুপুর ১২টায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে জনসভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ওই জনসভায়ও যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ জানান, অনুষ্ঠানস্থলে যাওয়ার পথে সকল পয়েন্টে ও মোড়ে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। নেওয়া হয়েছে 'ফুল-প্রুফ' নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এছাড়া, নজরদারির জন্য আধুনিক ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে।
উদ্বোধন উপলক্ষে বিশাল জনস্রোতের প্রস্তুতি হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে ৫০০টি অস্থায়ী টয়লেট, ভিআইপিদের জন্য ২২টি টয়লেট, বিশুদ্ধ পানীয় জল, একটি ২০ শয্যা এবং দুটি ১০ শয্যা বিশিষ্ট ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্র। প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স সুবিধাও পাওয়া যাবে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
সচিব, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও অন্যান্য পেশাজীবীরাসহ কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তারা এরই মধ্যে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মাওয়া পৌঁছেছেন। সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
আগামীকাল যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বহুল প্রত্যাশিত ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ স্বপ্নের পদ্মা সেতু। আর তাই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আজ সকালে থেকেই দেশের সর্বস্তরের লাখ লাখ মানুষ জড়ো হতে শুরু করেছে পদ্মার তীরে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের স্থানীয় সংবাদদাতারা জানান, সেতুর দুই প্রান্তে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আনন্দঘন অনুষ্ঠানে বরিশাল বিভাগ থেকে অন্তত দুই লাখ, খুলনা থেকে তিন লাখ এবং সারাদেশ থেকে আরও কয়েক লাখ মানুষ অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
রঙিন সাজে সজ্জিত অন্তত ৪০টি তিনতলা লঞ্চ প্রায় দেড় লাখ লোক নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় বরিশাল বিভাগীয় টার্মিনাল থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগর শাখাগুলো এ উৎসবমুখর পরিবেশের আয়োজন করে।
এর পাশাপাশি, দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মূল সুবিধাভোগী দেশের দক্ষিণঞ্চলের ৬টি জেলা থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাসসহ ও অন্যান্য সড়ক পরিবহনে করে অন্তত দশ হাজার মানুষ যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
টিবিএসের সঙ্গে আলাপকালে ট্রিপ আয়োজকরা জানান, লঞ্চের ভিতরে ভ্রমণকারীদের বিনোদনের জন্য নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছিলেন তারা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বরিশাল জেলা শাখার মহাসচিব তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, "বহুল প্রতীক্ষিত এই কর্মসূচিতে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।"
বরিশালের নথুল্লাবাদের বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সেক্রেটারি জোগলুল হায়দার বলেন, "শনিবার ভোর থেকে বিশেষ বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে।"
কেবল খুলনা জেলা থেকে প্রায় ৫০ হাজার লোক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন, ১ লাখ যোগ দেবেন বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা থেকে এবং খুলনা বিভাগের অন্যান্য সাতটি জেলা থেকে আসবেন প্রায় দেড় লাখ লোক।
এছাড়া খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ৫০০ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীও অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের মহাসচিব এমডিএ বাবুল রানা গতকাল সন্ধ্যায় টিবিএসকে বলেন, "আমাদের ৫০ হাজার নেতাকর্মীকে নিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য আমরা ৫০০টি বাস ভাড়া করেছি।" শুক্রবার রাত ১০টায় যাত্রা শুরু করার কথা জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের মহাসচিব মো. নজরুল ইসলাম জানান, শনিবার ভোরে ৩০০টি বাসে যাত্রা শুরু করেন তারা।
দেশের বৃহত্তম প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ প্রায় শতভাগ অভ্যন্তরীণ অর্থায়নে সম্পন্ন হয়েছে। নির্মাণ বাবদ মোট ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়ক ও রেলপথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি সংযুক্ত হলো। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে দেশের জিডিপি ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
১৯৯৯ সালে প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল পদ্মা সেতু নির্মাণের যাত্রা। এরমাঝে অসংখ্য বাধা-বিপত্তি ও বিতর্কের সম্মুখীন হতে হয়েছে এই প্রকল্পকে কেন্দ্র করে।
২০১৫ সালে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরুর কথা থাকলেও বিদেশি সাহায্য বাতিল হওয়াসহ নদীর গভীরতা বৃদ্ধি ও অন্যান্য জটিলতার কারণে কাজ শুরু করেত বিলম্ব হয়।
আমন্ত্রিত অতিথিদের প্রতিক্রিয়া
পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কূটনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা মাওয়া পৌঁছেছেন।
পদ্মা সেতুর আদলে নকশা করা মূল অনুষ্ঠানস্থলে প্রায় এক হাজার অতিথি এসেছেন। ভেন্যুতে একসঙ্গে সাড়ে তিন হাজার মানুষ অবস্থান করতে পারবেন।
স্বপ্নের প্রকল্প উদ্বোধনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ হাছান মাহমুদ বলেন, শৈশবের ঈদ উপভোগ করার কথা মনে হচ্ছে আজ।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম উচ্ছ্বাসিত হয়ে বলেন, বিশ্ব দেখবে নতুন বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে জাতি কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা দেখতে তিনি হেনরি কিসিঞ্জারকে এখনই বাংলাদেশ সফরের আহ্বান জানান।
বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেন, "প্রকল্পের তহবিল তুলে দিয়ে জাতিকে যে অপমান করা হয়েছিল, পদ্মা সেতু তার জবাব।"